Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দ উপজেলায় পদ্মা নদীতে ঝড়ে নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ ৩জনের মরদেহ উদ্ধার॥নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম

॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে গত রবিবার বিকেলে কাল বৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে পৃথক নৌকা ডুবিতে নিখোঁজের দুইদিন পর ৩জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল ২রা এপ্রিল সকালে মরদেহ ৩টি পদ্মায় ভেসে উঠলে তা উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় জনগণ।
উদ্ধারকৃতরা হলেন ঃ রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়নপুর এলাকার ছলেম শেখ ওরফে মোচন শেখের ছেলে রশিদ শেখ(৩২) এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ কাউজানি গ্রামের হাতেম সরদারের ছেলে বাবলু সরদার(৩২) ও জীবন সরদার(১৫)।
মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতিয়ার রহমান জানান, গত ৩১শে মার্চ বিকেলে একটি ছোট নৌকা নিয়ে চর ধুনচী এলাকায় পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে যায় স্থানীয় আয়ুব শিকদার, মিজান ও রশিদ শেখ। ঝড়ে তাদের নৌকাটি ডুবে গেলে আয়ুব শিকদার ও মিজান সাঁতরিয়ে পাড়ে এলেও রশিদ ফিরে আসতে পারেননি। অবশেষে গতকাল ২রা এপ্রিল সকালে পদ্মা নদীতে রশিদের মরদেহ ভেসে উঠলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তা উদ্ধার করে।
এদিকে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আতর আলী সরদার জানান, গতকাল ২রা এপ্রিল সকাল সাতটার দিকে দেবগ্রামের কাওয়ালজানি গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ভাটিতে নদীতে মাছ ধরার দুয়ারীর বাঁশের সঙ্গে একটি লাশ আটকে থাকতে দেখে স্থানীয় জেলেরা। তারা নিখোঁজ দুই ভাইয়ের পরিবারকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন বাবলু সরদারের লাশ হিসেবে শনাক্ত করে। পরে বেলা ১১টার দিকে ওই এলাকার ভেসে থাকা অবস্থায় এলাকাবাসী ছোট ভাই জীবন সরদারের মরদেহ উদ্ধার করে।
বাবলু সরদারের স্ত্রী আছিয়া বেগম বলেন, গত রোববার সকালে খাবার সঙ্গে নিয়ে সবার ছোট জীবনকে নিয়ে বাড়ি থেকে এক-দেড় কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর পাড়ে ধান মাড়াই করতে যায়। দিনের বেলায় তিন-চারবার মোবাইলে কথা হয়। বিকেল ৫টার দিকে ফোনে বাবলুর সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। এ সময় সে(বাবলু) জানায়, ধান মাড়াই হয়ে গেছে, তুমি তারাতারি আসলে ধান নিয়ে বাড়ি ফিরব। দ্রুত ছুটে গেলে আমাকে নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে বলে, তুমি দাঁড়াও নৌকাটা নদীর ওই পাড়ে (বিপরীত পাশে) রেখে আসি। এ সময় ছোট ভাই জীবনের আবদারে নৌকা নিয়ে যাবার সময় কাছে থাকা জাল দিয়ে মাছ ধরতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঝড় উঠে আসলে আমি দৌড়ে কাছাকাছি এক বাড়ি আশ্রয় নেই। এ সময় তারা মাঝ নদী পাড়ি দিয়ে যায়। ঝড় থেমে গেলে মোবাইলে ফোন দিয়ে দেখি বন্ধ। আশপাশে সবকিছু ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে, নৌকাও দেখা যাচ্ছে না। তখনই বুঝতে পারি নৌকা ডুবে গেছে। পরিবারের সবাইকে খবর দিলে একত্রে খোঁজ করতে শুরু করে।
এলাকার কয়েকজন জানান, হাতেম আলীর স্ত্রী, চার ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। বাবলু সরদার সবার বড় ও জীবন সরদার সবার ছোট। সবাই একত্রে মিলেমিশে চলতো। নদীতে মাছ শিকার ও কৃষি কাজের ওপর নির্ভর করে সংসার চলতো। এলাকাবাসীর দাবিতে বিনা ময়না তদন্তে স্থানীয় মুন্সি বাজারে জানাযা শেষে দৌলতদিয়া খানখাপাক শরীফের পাশে লাশ দাফন করা হয়েছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার আরো বলেন, বাবলু এলাকায় খুবই ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। যে কারণে দূর-দূরান্ত থেকে তাকে দেখতে এত মানুষ এসেছে। পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সে দেখাশুনা করতো। তার দুটি কন্যা শিশু সন্তান রয়েছে। কর্মঠ দুই সন্তান হারিয়ে পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় কাটছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবায়েত হায়াত বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্যের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সম্ভবত দূর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা থেকে ২৫হাজার টাকার অনুদান প্রদান করা হবে।