Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

১৩ই রজবের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় বাতাসে ভাসে গোলাপের সুবাস

## গ্রন্থনায় ঃ গোলাম জিলানী কাদেরী ##  সৈয়েদেনা হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) ৫৯৮ অথবা ৬০০ খ্রিস্টাব্দে যখন হুজুর পাক(সাঃ) এঁর বয়স ৩০ তখন ১৩ই রজব শুক্রবার খানা-এ-কাবায় জন্মগ্রহণ করেন। এ মহান ব্যক্তির নাম আল্লাহ্তায়ালার নির্দেশক্রমে হুজুর(সাঃ) “আলী” রাখেন। তাঁর পরিচিত নামগুলো ঃ হায়দার-এ-কারবার, হায়দার-এ-আসাদ, জায়েদ, আবুল হাসান, আবুল সিবতাইন, আবু রাইহান উদ্দিন, আবু তোরাব। উপাধি নাম ঃ সিদ্দিক-এ-আকবর, ফারুক-এ-আজম, আমীরুল মুমিনীন, আসাদুল্লাহ্, আল্ মুরতযা, সাফদার ইত্যাদি।
১ম হিজরী সনে মদিনায় রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) আনছার ও মুহাজিরদের মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন করে দেন আর হুজুর (সাঃ) স্বয়ং আলীকে নিজ ভ্রাতৃবন্ধনে আবদ্ধ করেন। হুজুর (সাঃ) এরশাদ ফরমান-“হে আলী তোমার সঙ্গে আমার সেরূপ সম্পর্ক যেমন হযরত মুসা ও হযরত হারুন(আঃ) এঁর সঙ্গে ছিল।” ২য় হিজরীতে রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) মহান আল্লাহ্তায়ালার নির্দেশ মতো প্রিয়তমা কন্যা সৈয়েদা হযরত ফাতেমা (সাঃ আঃ) এঁর সাথে হযরত আলীর বিবাহ দেন। ৩য় হিজরী সনে ওহোদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুসলিম সেনার কিছু সংখ্যক সেনা রাসুলুল্লআহ্(সাঃ) এঁর নির্দেশ অমান্য করে গণিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় কোরেশ দলপতি খালিদ বিন্ অলিদ দলবলসহ পুনরায় মুসলিম সেনাদের উপর প্রচন্ড বেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় কেউ কেউ যুদ্ধ করতে থাকে আর কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে পাহাড়ের গুহায় আত্মগোপন করে। কোন কোন মুসলিম মুসলিম সেনা দ্রুত পলায়ন করে। ওহোদের যুদ্ধ প্রচন্ড আকার ধারণ করে। এ যুদ্ধে হযরত আলী (আঃ) এঁর নিজ তলোয়ার ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) হযরত আলী (আঃ)কে “জুলফিকার” তরবারী দান করেন। তারপর হযরত আলী(আঃ) বীর বিক্রমে যুদ্ধ করতে থাকেন। সেই সময় অদৃশ্য বাণী ঘোষিত হলো ঃ “লা ফাতাহ্ ইল্লা আলী লা সাইফ্ ইল্লা জুলফিকার”-অর্থ ঃ আলীর সমকক্ষ কোন বীর নাই, আর জুলফিকারের সামনে কোন তলোয়ার নাই। ৫ম হিজরী খন্দকের যুদ্ধ হয়। আরবের সমস্ত গোত্রের লোক মদিনা আক্রমন করে। হুজুর (সাঃ) এঁর নির্দেশে মদিনা শহরের চারপাশে পরিখা খনন করে নগরবাসীর নিরাপত্তা বিধান করা হয়। ‘আমর বিন্ আবদ্ওদ্’ নামক এক দৈত্য আকৃতির কোরেশ পালোয়ান পরিখা অতিক্রম করে মুসলিম সেনাদের কাছে এসে চিৎকার করে যুদ্ধ করার জন্য আহ্বান জানাতে থাকে। হুজুর (সাঃ) কয়েকজন মুসলিম সেনাকে তার মোকাবিলা করতে আদেশ দেয়া সত্ত্বেও কেউ ঐ দৈত্যের সামনে যেতে সাহস পায় না। তখন হযরত আলী (আঃ) তার মোকাবিলা করতে রওনা হন। তাঁর (আলীর) রওনা হতে দেখে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন-“সমগ্র ঈমান সমগ্র কুফরের মোকাবিলা করছে।” হযরত আলী (আঃ) ঐ পালোয়ান ‘আমর বিন্ আবদ্ ওদ’কে লক্ষ্য করে জুলফিকার দ্বারা এমন আঘাত করলেন যার ফলে ঐ দুশমন তলোয়ারের একটা আঘাতেই দ্বি-খন্ডিত হয়ে যায়। ৭ম হিজরী সনের সফর মাসে খায়বারের যুদ্ধ হয়। এই খায়বার ছিল ইহুদীদের শক্ত ঘাঁটি। নবী পাক (সাঃ) এঁর নির্দেশে কিছু সংখ্যক মুসলিম সৈন্য খায়বারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু বিফল হয়ে ফিরে আসে। এমতাবস্থায় দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও বিজয় আসে না দেখে কিছু সংখ্যক মুসলিম সৈন্য পলায়নের প্রস্তুতি নেয়। তা বুঝতে পেরে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) ঘোষণা দেন-“আগামীকাল আমি এমন একজনকে পাঠাবো(পতাকা প্রদান করবো) যে বাহাদুর হবে এবং বিনা জয়ে ফিরে আসবে না। সে খোদা ও রাসুলকে বন্ধু মনে করে। আর খোদা ও রাসুল(সাঃ)ও তাঁকে বন্ধু মনে করে।” সে মোতাবেক হুজুর (সাঃ) হযরত আলী (আঃ)কে ডেকে পতাকা তাঁর হাতে দিয়ে বলেন-“হে আলী যাও, বিনা জয়ে ফিরে আসবে না।” হযরত আলী (আঃ) ময়দানে যান এবং ইহুদীদের সরদার ‘মারহাব’ ও তার ভাই ‘হারেস্’কে হত্যা করেন। খায়বারের বিখ্যাত দূর্গ ‘কামুস’ নিজের আয়ত্বে আনেন এবং বিজয় করায়াত্ত করে রাসুল (সাঃ) এঁর কাছে ফিরে আসেন। প্রকাশ থাকে যে, ঐ ‘কামুস’ দূর্গের লোহার দরজা ১০০ মন ভারী ছিল এবং ঐ দূর্গের দরোজা টেনে ছিঁড়ে তা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। মারহাবা। মারহাবা ॥ ইসলামে সৈয়েদেনা হযরত আলী (আঃ) এঁর এহছান, অবদান অপরিসীম। ইবনে খালদুন, যিনি বিখ্যাত ঐতিহাসিক। তিনি সিফফিনের যুদ্ধের পটভূমিতে বর্ণনা করেছেন-“সিফফিনের যুদ্ধে হযরত আলী (আঃ) এঁর নির্দেশনা, রণ কৌশলের ভিতর থেকে বড় রহস্য জ্ঞাত হয়েছে এবং এতে বোঝা যায় তাঁর চেয়ে বড় রণ কৌশলী কেউ নাই।” মুহাদ্দেস আহ্মদ বিন্ হাজর আল্ হাইতামী আল্ মক্কী হযরত আলী (আঃ) এঁর বিষয়ে উল্লেখ করেছেন-“আলী ইবনে আবু তালিব(আঃ) বিদ্যার(জ্ঞানের) খনি এবং আধ্যাত্ম্যবাদের রহস্য ভান্ডারের আকর।” কোরান ও নবী পরিবারের (আহলে বাইত) অনুসরণ করার ব্যাপারে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন-“রাসুল মকবুল(সাঃ) কোরান ও তাঁর নিজ পরিবারকে “সাকল্” শব্দ ব্যবহার করেছেন। কারণ ‘সাকল’ হচ্ছে এমন একটা সম্পদ- যা অতি উত্তম, মূল্যবান, অত্যন্ত ভারী ও সুরক্ষিত। সে কারণে এ দু’টো জিনিষ (কোরান ও নবী পরিবার) এমন যে, তার মধ্যকার প্রতিটি বস্তু আধ্যাত্ম্য জ্ঞানে পরিপূর্ণ এবং এর রহস্যগুলো বিশেষ জ্ঞান, খোদায়ী গুণ, শরীয়তের নির্দেশের পরিপূর্ণ রূপ।” নবী পাক (সাঃ) এ প্রসঙ্গে এরশাদ ফরমান-“সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্র যিনি আমার পরিবারকে প্রকৃত জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছেন। অতঃপর আমার পরিবারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যে সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠ- সে আলী বিন্ আবি তালিব।” (সূত্রঃ সাওয়ায়েকে মুহরেকা পৃষ্ঠা-১৪৯)।
নবী পাক (সাঃ) এঁর আহ্লে বাইতের শান্-মান-মর্যাদা স্বয়ং খোদাতায়ালা এভাবে পবিত্র কোরান করিমে এরশাদ করেছেন-“ইন্নামা ইউরিদুল্লাহু লি ইউ যাহিরা আনকুমুর রিজ্সা আহ্লাল বাইতি ওয়া ইউতাহ্হিরা কুম তাতহিরা।” (সুরা-আল্ আহ্যাব, আয়াত-৩৩) অর্থ ঃ ইয়া আল্লাহ্, এরাই তো আমার আহ্লি বাইত। তাদেরকে সকল নজামত (মন্দ জিনিষ) থেকে দূরে রাখুন আর এদেরকে খুব পাক সাফ ফরমান ….। পবিত্র হাদিসেও নবীপাক (সাঃ) আহলে বাইতি প্রসঙ্গে এরূপ বলেছেন-“কিতাবুল্লাহি হাবলুম মামদুম মিনাস্ সামাই ইলাল আরদে ওয়া ইতরাতি আহ্লাল বাইতি ওয়ালান্ ইয়া তাফাররাকা হাত্তা ইয়ারিদা আলাল হাউজ্।ি” (তথ্য সূত্র ঃ মিশকাত, মুসলিম, ইমাম আহমদ, তিরমিজি, হাকেম, আরজাহুল্ মতালেব, দুররে মনসুর ইত্যাদি)
অর্থ ঃ আমি তোমাদের মাঝে দু’টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সম ওজনের জিনিষ রেখে যাচ্ছি। একটা হলো কিতাবুলাহ্ অর্থাৎ পবিত্র কোরান আর অপরটি হলো আমার আহলাল বাইত অর্থাৎ আমার বংশধর। এ দু’টোকে আকড়ে ধরে থাকলে তোমরা কখনই বিপথগামী (গোমরাহ) হবে না। কোরান ও আমার আহলে বাইত সবসময় একত্রে থাকবে, তাদের গতিপথ কখনই ভিন্ন হবে না। শেষ পর্যন্ত এ দু’টোই হাউজে (কাউসারে) আমার সাথে একত্রে মিলিত হবে। সৈয়েদেনা হযরত আলী(আঃ) যিনি ইসলামের সমুদয় ঘটনার ইতিহাসে তাঁর মহান ত্যাগের জন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। যথা ঃ ওহোদ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর পুনঃবিজয়ের কারণ ছিল তাঁর জীবনবাজীর ইতিহাস। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে কোরাইশদের পলায়নের কারণ ছিল-তাদের ৯জন সেনাপতি একে একে হযরত আলী(আঃ) এঁর কাছে পর্যুদস্ত হয়ে ধরাশায়ী(নিহত) হয়েছিল। এর ফলে তাদের অন্তরে বীত্র ভীতির সঞ্চার হয়েছিল এবং তাদের দৃঢ়তায় ফাটল ধরেছিল।(প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা-২৫০)। ইবনে আবিল হাদীদ লিখেছেন-“রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এঁর অধিকাংশ সাহাবী ওহোদ যুদ্ধে যখন পলায়ন করছিল তখন কোরাইশ গোত্রের একটি অংশ এবং বনি আব্দে মানাফ গোত্রের একটি দল, যাদের মধ্যে ৪জন বীরও ছিল তারা রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) এঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ সময় হযরত আলী(আঃ) প্রজাপতির মতো রাসুলুল্লাহ্(সাঃ) এঁর চারপাশে তলোয়ার নিয়ে ঘুরছিলেন এবং শত্রুদেরকে হুজুর(সাঃ) এঁর নিকটবর্তী হওয়া থেকে বিরত রাখছিলেন। পঞ্চাশ জনের অধিক দলটি, যারা মহানবীর জীবননাশ করতে চেয়েছিল-একমাত্র হযরত আলী (আঃ) এঁর অগ্নিবৎ আক্রমনই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল।” শেখ ছাদুকের খেছাল গ্রন্থের বর্ণনা মতে-“হযরত আলী (আঃ) দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগের যে পরিচয় দিয়েছিলেন তা সত্যিই বিস্ময়কর। যুদ্ধ করতে করতে যখন তাঁর তরবারীটি ভেঙ্গে যায় তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর স্বীয় তরবারী ‘জুলফিকার’ হযরত আলী (আঃ)কে দেন-যাতে তিনি আল্লাহ্র পথে জেহাদ অব্যাহত রাখেন।” (তথ্য সূত্র ঃ খিছাল ; শেখ ছাদুক, দ্বিতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৫। হযরত আলী (আঃ) রাসুল (সাঃ) এঁর নিকট উপস্থিত থেকে যে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের আনজাম দিয়েছেন পুরোপুরিভাবে তা অন্য কারো বেলায় ঘটেনি। ইসলামে সর্বপ্রথম দাখিল হওয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরান করিমে ঘোষিত হয়েছে-“ইসলামে আমার ক্ষেত্রে যারা অগ্রগামী হয়েছে তারা আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন ও খোদায়ী রহমত লাভের ক্ষেত্রেও অগ্রগামী। (আর অগ্রগামীগণই তো অগ্রবর্তী, তারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত)।” (সুরা আল্ ওয়াফেয়াহ্, ১০-১১)। এখানে উল্লেখ্য, নবী পাক (সাঃ) এরশাদ করেন-“হাউজে কওসারে সবার আগে যে আমার সাথে মিলিত হবে-সে হলো তোমাদের আগে ইসলাম গ্রহণকারী আলী ইবনে আবি তালেব।” (মুস্তাদরাকে হাকেম, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা-১৩৬)। নাহ্জুল বালাগাহ্ ঃ আবদুহ্ , দ্বিতীয় খন্ড, ১৮২ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আঃ) বলেন-“উটের বাচ্চা যেমন মায়ের পিছনে পিছনে যায়, আমিও সেইরূপ মহানবী (সাঃ) এঁর পিছনে পিছনে যেতাম ; তিনি প্রতিদিনই চারিত্রিক ফজিলতের কোন না কোন বিষয়ে আমাকে শিক্ষা দিতেন এবং তা অনুসরণের আদেশ দিতেন।” তিনি ছিলেন “জ্ঞান নগরীর দ্বার।” তিনি নবুয়তির জ্ঞান ভান্ডার হতে সরাসরি জ্ঞান আহরণ করেছেন। সৈয়েদেনা হযরত আলী (আঃ) এরশাদ ফরমান-“জেনে রেখো আহলে বাইতে রাসুল(সাঃ) হলো- আল্লাহর গুপ্ত বিষয়ের (সিরর) ধারক, আল্লাহ্ সম্পর্কীয় জ্ঞানের মূলাধার, প্রজ্ঞার কেন্দ্র-বিন্দু, আল্লাহর কিতাবের উপত্যকা ও তাঁর দ্বীনের পর্বত। তাঁদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনের বক্র পীঠ সোজা করলেন এবং দ্বীনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কম্পমান অবস্থা দূরীভূত করলেন।” তিনি আরো ফরমান-“রাসুল (সাঃ) এঁর আহলে বায়েতকে বিশ্বের কোন ব্যক্তিকেই তাঁদের সমকক্ষে আনা যাবে না, মহত্বে তাঁদের সমতূল্য কাউকে মনে করা যাবে না। কারণ এ বিশ্ব তাঁদের অনুগ্রহে ভরপুর। তাঁদের কাছ থেকে প্রাপ্ত হেদায়েত ও দিক-নির্দেশনার মাধ্যমেই বিশ্ব চিরন্তন নিয়ামত পেতে পারে। তাঁরা হলেন দ্বীনের বাঁচার জন্য পুষ্টিকর খাদ্য স্বরূপ।” হযরত আলী (আঃ)কে সৈয়েদুল মুরসালিন হুজুর পাক (সাঃ) নিজ গৃহে এনে মনের মতো করে গড়ে তোলেন। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেন। এক আদর্শ মানুষ হিসেবে আল্লাহ্র প্রেমে বুঁদ হওয়া এই আদর্শ মানুষ। হযরত আলী (আঃ) কালক্রমে এমন বিদ্যা-বুদ্ধির অধিকারী হয়ে উঠেন যে হুজুর (সাঃ) বলতেন-“আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দ্বার।” হুজুর (সাঃ) এঁর চর্বিত খাদ্যদ্রব্য তিনি তবারুক মনে করে খেতেন। একপর্যায়ে রেসালতের মুখের লালা মোবারক খাওয়ানোর পর তিনি জ্ঞান শাস্ত্রে অসাধারণ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। এর ফলে দশ দিগন্ত হতে একই আওয়াজ উঠতে থাকে-“ফাউকাল্ কালামুল্ মাখ্লুক ওয়া তাহ্তাল কালামুল খালিক।” অর্থ ঃ সৃষ্টির কালামের উর্দ্ধে এবং ¯্রষ্টার কালামের নীচে। লেবাননের একজন প্রখ্যাত খ্রিষ্টান লেখক ‘মিখাইল নাইমা যারেগ্ পুরঘাক্’ তাঁর লিখিত ‘ইমাম আলী’ বইয়ের ভূমিকায় এভাবে উল্লেখ করেন-“আলী শুধু যুদ্ধের ময়দানেই বিজয়ী ছিলেন না বরং সকল ময়দানেই তিনি বিজয়ী ছিলেন।” এই শতাব্দীর একজন সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক ‘মোকায়েব আরসালান’ যাঁকে ‘আমিরুল বায়ানের’ খেতাব দেয়া হয়। মিশরের এক সেমিনারে সম্মানীত ব্যক্তিগণের মধ্য থেকে একজন ভাষণ দেয়ার সময় বলেন-“ইসলামের ইতিহাসে ২ জন এমন বক্তা জন্ম নিয়েছেন-যাঁদেরকে “আমীর বক্তা” বলা হয়, তাঁরা হলেন ১) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব এবং ২) মোকায়েব আরসালান। তখন মোকায়েব আরসালান সেই জলসা থেকে উঠে বক্তাকে নিজ বুকে টেনে নেন এবং মাইক নিয়ে বলেন-“কোথায় আমি আর কোথায় হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)। হযরত আলী (আঃ) এঁর পায়ের জুতার ধূলা পর্যন্তও আমি পৌঁছাতে পারবো না।” সোবহান আল্লাহ্।
ঔস’ফে আলী বে গোফ্তেগূ মোমূকেন্ নীস্ত্
গোন্জ’য়েশে বাহ্র্ র্দা সাবূ মোমূকেন্ নীস্ত্
মান্ য‘ত্ র’ বে ভ’জেবী কেই দ’নাম্
এল্ল’ দ’নাম কে মস্লে ঊ মোমূকেন্ নীস্ত্
অনুবাদ ঃ বর্ণনা করে আলীর প্রশংসা করা সম্ভব নয়
যেমন সমুদ্রকে ঘটিতে ধারণ করা সম্ভব নয়
আমি তাঁর সত্তা সম্পর্কে কিইবা জানতে পারবো
কেবল এটুকু জানি যে, কেঊ তার সমকক্ষ নয়।
Ñখাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি।
পবিত্র কোরানের বাণী ঃ “হে রাসুল (সাঃ) আপনার প্রতি এই কোরান নাজিল করেছি যেন আপনি এই কোরানের শিক্ষা এবং ব্যাখ্যা মানুষকে বুঝিয়ে দেন ; আর মানুষ যেন এটা ভেবে দেখে।” (সুরা নাহ্ল, আয়াত-৪৪)
টীকা ঃ সত্যকে না জানা যে অপরাধ, এই অপরাধই মানুষকে নিস্পৃহ করে ফেলেছে। পবিত্র কোরানের জটিল বিষয়গুলো “আহলে জিকির”দের কাছ থেকে জেনে নেয়ার নির্দেশ আল্ কোরানে এসেছে। (সুরা নাহ্ল, আয়াত-৪৩) দ্রষ্টব্য। “যে নিজেকে পবিত্র করেছে-সে কৃতকার্য্য হয়েছে।” (সুরা সামস, আয়াত-৯)। খোদাভীরুগণ আল্লাহ্র হুকুম মেনে চলেন। তাঁর হুকুমের কাছেই নত হন। আর ইবলিস এটাই পরেনি।