Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

টক অব দ্যা বাংলাদেশ॥নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা

##মীর আফরোজ জামান## নিউজিল্যান্ডকে পৃথিবীর একটি শান্তিময় দেশ মনে করা হয়। সেখানে মসজিদে গুলি করে মানুষ হত্যার ঘটনায় হতবাক হয়েছি। পৃথিবীর কোথাও আজ নিরাপত্তা নেই। আমরা এক ভয়ংকর দুনিয়াতে বাস করছি। তদন্ত হবে জানি, আমাদেরও জানা দরকার হামলার টার্গেট শুধু মসজিদের মুসল্লীরা ছিলেন না, আমাদের ক্রিকেটাররাও ছিলেন? কী কারণে এই নিষ্ঠুর হামলা? শুকরিয়া আল্লাহ্ সবসময় আমাদের পাশে থাকেন এবং থাকবেন।
একসময় বাংলাদেশ বেতারে কাজ করতাম। সিডরের আঘাত হানার দিন সারা দেশে বিদ্যুৎ ছিল না-একমাত্র বাংলাদেশ বেতারই ছিল জনগণের ভরসা। সেই থেকে রেডিওর নিউজের প্রতি এখনও দুর্বল। সিডরের রাতের ১১টা ও ১২টার বুলেটিন পড়তে হয়েছিল। আজ (শুক্রবার) দুপুরের রেডিও বেজিং এর খবর শুনে গা সিউরে উঠলো। নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে অন্ততঃ দু’টি মসজিদে অজ্ঞাত বন্দুকধারী হামলা চালিয়েছে। এতে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা অর্ডেন জানান হামলায় ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ২জন বাংলাদেশী রয়েছেন বলে খবরে বলা হলো। এছাড়া হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ২০জনের বেশি। আহতদের মধ্যেও ৫জন বাংলাদেশী রয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
খবরে জানলাম, ক্রাইস্টচার্চ শহরের হ্যাগলি পার্কমুখী সড়ক দীন এভিনিউতে আল নুর মসজিদে স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টা নাগাদ এই হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া অন্য আরো একটি মসজিদের হামলা চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে। এ হামলায় অল্পের জন্য রক্ষা পান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা অর্ডেন বলেছেন, এটি নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের কলঙ্কময় দিনগুলোর একটি। দেশটির পুলিশ কমিশনার মাইক পুশ বলেছেন, এই ঘটনায় ৪জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন নারী রয়েছেন। আরো একজন বন্দুকধারী সক্রিয় থাকতে পারে বলে সতর্ক করেছে পুলিশ। আটক হামলাকারীদের একজন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। এছাড়া পরবর্তী নোটিশ না দেয়া পর্যন্ত সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়ী থেকে বের হতে এবং রাস্তায় নামতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী ঘোষণা না আসা পর্যন্ত স্কুলও বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয় মসজিদে হামলাকারী একজন হামলার সময় ফেসবুকে ভিডিও গেম টাইপের লাইভ মেনিফেস্টো দেখাচ্ছিল এবং সে ইমিগ্র্যান্ট প্রত্যাশী ছিল।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আমাদেরকে সারা দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করিয়েছে। আমাদের ক্রিকেটাররাই কি হামলাকারীদের টার্গেট ছিল নাকি অন্য কিছু?
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিকাংশ সদস্য বাসে করে ক্রাইস্টচার্চে ওই মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে যান। তারা ওই মসজিদে প্রবেশের আগ মুহূর্তেই এ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। ‘সেখানে নামাজ পড়তে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা নিরাপদে থাকলেও তারা মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল টুইটারে এক বার্তায় বলেন, ‘ভয়াবহ এ হামলা থেকে পুরো দল রক্ষা পেয়েছে। এ এক ভীতিকর অভিজ্ঞতা। আপনারা সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’
এপির খবরে বলেছে হামলাকারী নাকি নিউজিল্যান্ডের নাগরিকত্বের প্রত্যাশী ছিল। নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যই কি বাংলাদেশে জেএমবি উত্থানের মতো করে বোমা ফাটিয়ে মানুষ মেরে আগুন সন্ত্রাস করে তেঁতুল সন্ত্রাসীদের কায়দায় আলোচিত হতে চেয়েছিল? এসব মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তাই যদি না হয় তাহলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষায় বলতে হয়, এটি আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদেরই কান্ড। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনগণের নেত্রী শেখ হাসিনারও অঙ্গীকার বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গী কার্যকলাপ ও মাদকের বিরুদ্ধে কোন ছাড় নেই। তিনি এসবের বিরুদ্ধে ”জিরো টলারেন্স” ঘোষণা করেছেন এবং সেভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সে যাই হোক, নিউজিল্যান্ডের ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক, পৃথিবীর কোন দেশ যেন সন্ত্রাসবাদের কাছে জিম্মি না হয়।
এ ঘটনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউজিল্যান্ডে দু’টি মসজিদে গুলি চালিয়ে অনেক লোক হতাহতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাদেশের জনগণের কাছেও এখন বিষয়টি ”টক অব দ্যা বাংলাদেশ”। কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট টিম বিশ্বের যে কোন খেলোয়াড়দের সাথে লড়তে পারে। সেই ক্রিকেট টিম যে সময় নিউজিল্যান্ডে খেলতে গেছে এবং টিমের খেলোয়াড়রা অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এটি নিঃসন্দেহে একটি খারাপ সংবাদ। ঘটনাটি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে।