Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৩রা মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, জেলা জাসদের (ইনু) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ নিজাম মন্টু, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সভাপতি প্রফেসর শংকর চন্দ্র সিনহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আশেক হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান খান, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩০ লক্ষ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো ২ লক্ষ মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে দখলদার পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। সেটি বঙ্গবন্ধুর সঠিক নেতৃত্ব এবং দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাসের কারণেই সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের রাতের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পূর্বেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই ঘোষণাই পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেতার তরঙ্গ ও বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রচার করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। নয় মাস সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে পাকিস্তানীদের এদেশীয় দোসরদের হাতে নিহত হওয়ার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত যখন স্বাধীনতার বিরোধীরা ক্ষমতায় ছিল তখন আমাদের দেশের ভভিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি এবং দেশের জন্য যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের কোন মূল্যায়নই করেনি। যখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসল তখন থেকেই আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হলো। আজ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাঠ্যপুস্তকসহ বিভিন্নভাবে আমাদের স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধারও তাদের প্রকৃত সম্মান পাচ্ছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজবাড়ীতে ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হবে। এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে কর্মসূচী পালনের ব্যাপারে একটি দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেই কর্মসূচীর সাথে সঙ্গতি রেখে রাজবাড়ীতে বর্তমান সরকারের এই মেয়াদের ১ম বছর হওয়ায় আরো বেশী সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসও জাতীয় কর্মসূচীর আলোকে পালন করা হবে। স্বাধীনতা দিবস ও গণহত্যা দিবসে যে সমস্ত কর্মসূচী পালন করা হবে তার মধ্যে রয়েছে, ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসে সকল শহীদের স্মরণে বাদ যোহর সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা, বিকালে লোকসেড বদ্ধভূমিতে পুষ্পমাল্য অর্পণসহ আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রদীপ প্রজ্জা¡লনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত ২৫শে মার্চের শহীদদের স্মরণে ১ মিনিট সকল বাতি বদ্ধ করে ব্লাক আউট পালন করা হবে। জেলাবাসীকে এই ব্লাক আউট কর্মসূচী পালনের জন্য্য আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া স্বাধীনতা দিবস ও গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শিশুদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা বিশেষ ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্য্যমে দিবসের সূচনা, সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী, বেসরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সকালে পর্র্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আ¤্রকানন চত্বরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য, শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক, লোকসেড বধ্যভূমি, লক্ষ্মীকোলের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রফিক, সফিক, সাদিকের কবরস্থান ও নিউ কলোনীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আঃ আজিজ খুশির কবরস্থানে শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ, সকাল ৮টায় কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সম্প্রচার, সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, শারীরিক কসরত, ডিসপ্লে প্রদর্শন ও পুরষ্কার বিতরণ, দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের সরকারী বাসভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা, সাধনা সিনেমা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন, বাদ যোহর জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত কার হবে এবং মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে তাদের সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা, দুপুরে জেলা কারাগার, সরকারী শিশু পরিবার ও সরকারী হাসপাতালে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, বিকাল ৩টায় রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাব ও লেডিস ক্লাব প্রাঙ্গণে মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাড়ে ৩টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে সরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারী বনাম বেসরকারী কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের মধ্যে দাঁড়িয়াবাধা প্রতিযোগিতা, জেলা প্রশাসন বনাম রাজবাড়ী পৌরসভা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বনাম রাজবাড়ী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, জেলা পুলিশ বনাম শিক্ষক ও রাজবাড়ী প্রেসক্লাব বনাম জেলা বার এসোসিয়েশনের মধ্যে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সন্ধ্যায় শহরের প্রধান প্রধান সড়কসমূহ ও সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে দৃষ্টিনন্দনভাবে আলোকসজ্জা করা হবে।