॥বালিয়াকান্দি প্রতিনিধি॥ উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবং দামও ভালো পাওয়ায় মসুরী(ডাল) চাষে আগ্রহী হচ্ছে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। এ বছর উপজেলার ১৩৭৫ হেক্টর জমিতে মসুরীর চাষ হয়েছে বলেছে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অতি পরিচিত অন্যতম একটি ফসল মসুরী। দেশের প্রতিটি মানুষই মসুরীর ররডাল খেয়ে থাকে। মসুরীর ডাল থেকে আমরা আমিষ ও প্রোটিনের চাহিদা মিটিয়ে থাকি। দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই কম-বেশী মসুরীর চাষ হয়ে থাকে। দো-আঁশ মাটিতে মসুরীর ফলন ভালো হয়। বালিয়াকান্দি উপজেলার কৃষকরাও যুগ যুগ ধরে মসুরীর চাষ করে আসছে। তার মধ্যে জঙ্গল, বহরপুর ও নারুয়া ইউনিয়নে মসুরীর চাষ বেশী হয়। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হলে এ বছর মসুরীর ভালো ফলনের আশা করছে চাষীরা।
নারুয়া ইউনিয়নের ঘিকমলা গ্রামের চাষী কোম মোল্লা বলেন, আমরা বাব-দাদার আমল থেকে বিভিন্ন চৈতালী ফসলের আবাদ করে আসছি। মসুরীর মৌসুমে আমরা কম-বেশী এই ফসলের আবাদ করে থাকি। এ বছর ৩৪ শতাংশ জমিতে মসুরীর চাষ করেছি। আশা করছি উৎপাদন ভালোই হবে। কোন কোন বছর মসুরীর উৎপাদন খরচের তুলনাই দাম কম হওয়ায় লোকসানও হয়।
ইসলামপুর ইউনিয়নের কৃষক আসমত আলী বলেন, এ বছর আমন ধান কাটার পর ৬৭ শতাংশ জমিতে মসুরী বুনেছি। গাছগুলো বেশ সতেজ ও তরতাজা হয়েছে। আশা করছি কোন রোগ-বালাই বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে ভালো ফলন পাবো।
নবাবপুর ইউনিয়নের কৃষক লোকমান বলেন, মাঝের কয়েক বছর মসুরীর আবাদ কমে গিয়েছিল। এ বছর অনেকেই মসুরীর আবাদ করেছে। আমাদের এলাকার মাটি মসুরী আবাদের উপযোগী হওয়ায় ফলন বেশ ভালো হয়। এ বছরও ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
একই ইউনিয়নের কচরাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আয়ুব হোসেন বলেন, আবাদী জমির মধ্যে যে সকল জমি মসুরী চাষের উপযোগী সেসব জমিতে মসুরীর আবাদ করে থাকি। এ বছর ৮২ শতাংশ জমিতে মসুরীর চাষ করেছি। গত বছর প্রতি পাখি জমিতে ৪ মণ করে মসুরী পেয়েছিলাম। আশা করছি এ বছরও ফলন ভালো হবে।
কৃষকরা জানান, মসুরী চাষে কৃষকদের তেমন কষ্ট করতে হয় না। জমিতে আগের ফসল কাটার পর চাষ দিয়ে মসুরীর বীজ বুনে দিতে হয়। এরপর মোটামুটি পরিচর্যা করলেই মসুরীর গাছগুলো বড় হয়ে মসুরী ধরে। মসুরী পাকা শুরু করলে ক্ষেত থেকে উঠিয়ে শুকিয়ে গরু দিয়ে মলন দিয়ে গাছ থেকে ফল আলাদা করা হয়। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী মেশিন দিয়ে অনেকেই মসুরী মাড়াই করে থাকে। মাড়াই করা ডালগুলো গ্রাম অঞ্চলে ঢেঁকি বা যাঁতায় পিষে ডাল বানানো হয়। এছাড়া মেশিনের সাহায্যেও ডাল বের করা হয়। মাড়াইয়ের পরে গাছগুলো জ্বালানী ও ডালের ভুষি গরু-ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মসুরী চাষ লাভজনক। কৃষকদের তেমন কষ্ট করতে হয় না। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে এ বছরে ১৩৭৫ হেক্টর জমিতে মসুরীর চাষ হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।