Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

আলাদীপুরে অসহায় একটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম নওয়াব আলী

॥সুশীল দাস॥ মোঃ আশরাফ আলী মাস্টার(৫৫)। এক সময়ের তুখোড় আওয়ামী লীগ নেতা। রাজনীতি করতেন ঢাকায়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছিল নিত্যদিনের সরব উপস্থিতি। ছিলেন ঢাকা মহানগরের ২১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক।
এছাড়াও ছিলেন রমনা থানা আওয়ামী বাস্তুহারা লীগের সাধারণ সম্পাদক, শাহবাগ এলাকার কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সহ-সম্পাদক। রাজনীতির পাশাপাশি গৃহ শিক্ষকতা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টাররোলে চাকরীও করতেন। পরিবার নিয়ে শাহবাগ এলাকাতেই সুখে-শান্তিতে বসবাস করতেন।
কিন্তু ৫/৬ বছর আগে দুই দফায় ব্রেন স্ট্রোক করার পর হারিয়ে ফেলেন কথা বলার শক্তি, কর্মক্ষমতা ও শারীরিক ভারসাম্য। ৬ মেয়েকে নিয়ে স্ত্রী পারুল বেগম পড়েন অথৈ সাগরে। নিজে এখানে-সেখানে কাজ করে পেট চালালেও স্বামীর চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য তার হয়নি। স্বামীর দল বা অন্য কারো কাছ থেকেও পাননি এতটুকু সহায়তা। এর মধ্যেও কষ্ট করে বড় ২ মেয়েকে বিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত ঢাকায় আর টিকতে না পেরে গত বছরের শীতের সময় ছোট ছোট ৪ মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে চলে আসেন রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর ১নং কলোনীর মামাতো ভাইদের এখানে। মাত্র ২টিন ও ভাঙ্গা বেড়ার ছাগল রাখার ঘরে আশ্রয় জোটে তাদের।
তাদের এই দুরবস্থার কথা জানতে পেরে পাশে দাঁড়ান রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী। আপদকালীন সহায়তাসহ পারুল বেগমের মামাতো ভাইদের রাজী করিয়ে তাদের ১শতাংশ জায়গার উপর সম্পূর্ণ নিজের অর্থে তুলে দেন একটি টিনের বসতঘর। সেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে পারুল বেগম এখন আশপাশের বিভিন্ন স্থানে কাজকর্ম করে ভারসাম্যহীন স্বামী ও ছোট ছোট মেয়েদের নিয়ে কোনরকমে দিন পার করছেন।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী বলেন, গত বছরের শীতের সময় পারুল যখন ভারসাম্যহীন আশরাফ আলীকে নিয়ে আসার পর প্রথমে তাকে চিনতেই পারিনি। আমি তাকে দেখেছি ঢাকা শহরে গলায় টাই পড়ে ঘুরতে। সদর্পে রাজনীতি করে বেড়াতে। কেউ বড় অসুখ-বিসুখে পড়লে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই বড় ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে দিতেন। সবাই যাকে সমীহ করতো সেই আশরাফ আলী মাস্টারের একি হাল! সব শুনে তাৎক্ষণিক লোক দিয়ে ভালো মানের ২টি কম্বল কিনে দেই এবং উদ্যোগ নিয়ে আশরাফ আলীর স্ত্রী পারুল বেগমের মামাতো ভাইদের রাজী করিয়ে তাদের ১শতাংশ জায়গার উপর আমার ২ মাসের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকাসহ আরও কিছু টাকা যোগ করে থাকার মতো একটি টিনের ঘর তুলে দেই। ১টি ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছি। এছাড়া ১টি টিউবওয়েল ও টয়লেটের ব্যবস্থাও করে দিব।
এস.এম নওয়াব আলী আরও বলেন, আমি যতদূর জানি আশরাফ আলী মাস্টারের বাড়ী ছিল বরিশাল জেলায়। কিন্তু সেখানে তিনি বেশী দিন থাকেননি। তার সবকিছুই ছিল রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক। সেখানেই তিনি গৃহ শিক্ষকতা, চাকরী, রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া পারুল বেগমকে নিয়ে তার মা ঢাকায় থাকার সময় দেখতে-শুনতে খুব সুন্দর হওয়ায় আশরাফ আলী অতীত ব্যাকগ্রাউন্ড না দেখে তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর একটি ছেলে সন্তানের আশায় একে একে তাদের ৬টি মেয়ে হয়। তা সত্ত্বেও তারা ভালোই ছিলেন। কিন্তু ২দফায় ব্রেন স্ট্রোক করে আশরাফ আলী বাকশক্তি, কর্মক্ষমতা ও শারীরিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় পরিবারটি পথে বসে যায়। বরিশালের গ্রামে সহায়-সম্পত্তি যা ছিল তাও তার সৎ ভাইয়েরা নিজের করে নিয়েছে। নিরুপায় হয়েই তারা আলাদীপুরে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের জন্য যতটুকু সম্ভব করেছি। আরও করবো। জনপ্রতিনিধিসহ যাদের সামর্থ্য আছে আমি তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি তারাও যেন অসহায় আশরাফ আলীর পরিবারের পাশে দাঁড়ান।
গতকাল ২১শে জানুয়ারী সকালে এস.এম নওয়াব আলীর সঙ্গে গিয়ে দেখা যায়, আশরাফ আলী ও পারুল বেগমসহ তাদের ৩ মেয়ে নওয়াব আলীর তুলে দেয়া ঘরের সামনেই বসে আছে। আরেক মেয়ে স্কুলে গেছে। ঘরটি তারা সুন্দর পরিপাটি করে সাজিয়েছে। পারুল বেগম জানালেন, বড় ২ মেয়ে আফরোজা আক্তার ময়না(২৩) ও আফসানা খাতুন বৃষ্টি (২১)কে বরিশাল ও নরসিংদীতে বিয়ে দিয়েছেন। এর পরের কিশোরী ২ মেয়ে আফরিন আক্তার আঁখি (১৯) ও চাঁদবানু লাকি (১৭)তে ঢাকায় গার্মেন্টসে দিয়েছেন। বর্তমানে তারা ছুটিতে বাড়ীতে আছে। তার পরের জন আইরিন আক্তার ইতি(৯) স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে পড়ছে। সবার ছোট স্মৃতি আক্তার আয়েশার বয়স ৫ বছর। গার্মেন্টসে কাজ করা মেয়ে দু’টি কিছু টাকা দেয় আর তিনি নিজে এখানে-সেখানে কাজ করে কোনমতে সংসার চালাচ্ছেন। তার সবচেয়ে খারাপ লাগে এ কারণে যে তিনি স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারেননি। পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) একবার দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তারা যে ওষুধ লিখে দিয়েছিলেন তার ব্যয় প্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার টাকার, তাও চালিয়ে যেতে নিয়মিত। তাই তার পক্ষে স্বামীর চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। যদি কোন দিন সুযোগ আসে তাহলে চিকিৎসা করাবেন। জীবনের সবচেয়ে দুঃসময়ে নওয়াব আলী ভাইয়ের কাছ থেকে তারা যে সহযোগিতা পেয়েছেন তার ঋণ কোনদিন শোধ হওয়ার নয়।
আলীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কাশেম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার বদৌলতে পরিবারটি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বার বা সরকারী কোন দায়িত্বে না থাকলেও তিনি সবসময়ই তার সাধ্যমতো সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ান। তার জীবন ও কর্ম আমাদের কাছে অনুসরণীয়।
আলীপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী আমাদের ইউনিয়নের অভিভাবক। সাধারণ মানুষ সবসময় তাকে পাশে পায়। অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোয় তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ আরো বেড়ে গেছে।
পরিবারটির বিষয়ে এস.এম নওয়াব আলী বলেন, বর্তমানে আশরাফ আলীর নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার অর্থ তারা পেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই নগন্য। উপরন্তু সেই ভাতার অর্থও আশরাফ আলীর স্ত্রীকে ঢাকার মগবাজারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে তুলতে হচ্ছে। ৩ মাস অন্তর যা পাচ্ছে তার সিংহভাগই চলে যাচ্ছে আসা-যাওয়ার ভাড়া বাবদে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচীর আওতায় তাদেরকে যে কোন একটি ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করে দেয়ার চেষ্টা করছি। সেটা হয়ে গেলে তাদের দুর্দশা কিছুটা হলেও কমবে। আমার সহধর্মিনীর (মিসেস শাহানা বেগম, জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য) ওখান থেকেও সুযোগ হলে তাদেরকে সহায়তা করা হবে। আমি আন্তরিকভাবে চাই তারা ভালো থাকুক।
উল্লেখ্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম নওয়াব আলী আসন্ন পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী।