Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে বয়কটের আহবানে রাজবাড়ীতে বিজয় দিবস পালিত

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ বিজয়ের মাসে সাম্প্রদায়িক শক্তি যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে এবং আগামী ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসর স্বাধীনতা বিরোধী সকল প্রার্থীকে বয়কটের আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে জাতি।
নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। সেই বিজয়ের ৪৭তম বার্ষিকী গত ১৬ই ডিসেম্বর সারাদেশের ন্যায় রাজবাড়ী জেলার সর্বত্র উদযাপিত হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর-
জেলা প্রশাসন ঃ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত ১৬ই ডিসেম্বর প্রত্যুষে রাজবাড়ী পুলিশ লাইন্সে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সকল সরকারী, বেসরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত ভবনে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। এরপর পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আ¤্রকানন চত্বরে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য, শ্রীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলক, লোকোসেড বধ্যভূমি, লক্ষ্মীকোলের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রফিক, সফিক, সাদিকের কবরস্থান ও নিউ কলোনীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আঃ আজিজ খুশির কবরস্থানে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা’র নেতৃত্বে জেলা পুলিশ এবং সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্সের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগ, অন্যান্য সরকারী দপ্তর ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়াও রেলগেটের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধাঞ্জলী অর্পণ করে।
সকাল সাড়ে ৮টায় কাজী হেদায়েত হোসেন স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ সম্প্রচার ও ৯টায় জেলা প্রশাসক কর্তৃক জাতীয় সংগীতের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার সমাবেশ পরিদর্শন করেন। এরপর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার লিখিত বাণী পাঠ করেন।
বাণী পাঠ শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী ও পুলিশ সুপার পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা শান্তির প্রতীক পায়রা অবমুক্ত ও বেলুন উড়িয়ে মহান বিজয় দিবসের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনের পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ, বিএনসিসি, আনসার ও ভিডিপি, কলেজ ও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, সরকারী শিশু পরিবার, রোভার স্কাউটস, বয়েজ স্কাউটস, গার্লস গাইড, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ করেন। কুচকাওয়াজের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শারীরিক কসরত ও ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। এরপর কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে বিজয়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী এমপি, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণসহ বিপুল সংখ্যক দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
এরপর দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের বাসভবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সাড়ে ১২টায় সাধনা সিনেমা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন, বাদ যোহর সকল মসজিদে এবং সুবিধামত সময়ে মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে জাতির শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হয়। দুপুরে হাসপাতাল, জেলখানা, এতিমখানা ও সরকারী শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিকাল ৩টায় রাজবাড়ী অফিসার্স ক্লাব ও মহিলা ক্লাব প্রাঙ্গণে মহিলাদের অংশগ্রহণে আলোচনা অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
খেলা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রাজবাড়ী পৌরসভার সৌজন্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিকাল ৪টায় বিসিক চানমারীতে শ্যূটিং প্রতিযোগিতা এবং সন্ধ্যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী এবং বিজয় দিবসের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও সন্ধ্যায় শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সরকারী-বেসরকারী ভবনসমূহে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা করা হয়।