॥স্টাফ রিপোর্টার॥ মার্কিন কংগ্রেসে মৌলবাদী সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র-শিবিরকে দেশের স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য চলমান হুমকি উল্লেখ করে বাংলাদেশ সরকারকে তাদের রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দাপ্তরিক ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী ইন্ডিয়ানা স্টেটের কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাংকস ‘বাংলাদেশে সক্রিয় ধর্ম-রাষ্ট্রিক সংগঠনগুলোর সৃষ্ট গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকির বিষয়ের উদ্বেগ প্রকাশ’ শীর্ষক এ বিলটি গত ২০শে নভেম্বর হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে উত্থাপন করেন। খবর বাসস।
ওয়েব সাইটের তথ্য অনুযায়ী হাউজ রেজাল্যুশন ১১৫৬ হাউজ ফরেন এ্যাফেয়ার্স কমিটিতে রেফার করা হয়েছে।
বিলটিতে ইউনাইটেড স্টেট এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (্ইউএসএইড) ও মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সকল গ্রুপের সঙ্গে সব ধরনের অংশীদারিত্ব ও তহবিল ব্যবস্থাপনা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়।
বিলটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বিগত নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল(বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। যার ফলে ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারী পর্যন্ত ৪৯৫টি হিন্দু বাড়ি ধ্বংস করা হয়। ৫৮৫টি দোকানে হামলা ও লুট এবং ১৬৯টি উপাসনালয় ভাংচুর করা হয়।
বিলটিতে আরো বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী কর্মীরা সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত।
আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮ বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে উল্লেখ করে বিলটিতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিলটিতে বাংলাদেশের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধে হতাহতদের কথা এবং বাংলাদেশ যে ধর্ম-নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
বিলে বাংলাদেশের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে এবং একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে উল্লেখ করে বলা হয়, ‘এই স্বাধীনতা অর্জিত হয় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু, এক কোটির বেশি মানুষের উদ্বাস্তু হওয়া ও দুই লাখ নারী ধর্ষিত হওয়ার বিনিময়ে। আর এর অনেক ঘটনা ঘটেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে ইসলামপন্থী উগ্রবাদীদের হাতে।’
বিলটিতে বলা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর উপর্যুপরি হামলা ধর্মীয় অসহিংসতা বাড়াচ্ছে এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরসহ উগ্র মৌলবাদী সংগঠনগুলোর সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ ক্ষুণœ করছে।
এদিকে ফিলাডেলফিয়া ভিত্তিক থিংকট্যাংক মিডল ইস্ট ফোরাম (এমইএফ) এক বিবৃতিতে এ বিলকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি প্রভাবশালী ও বিপজ্জনক ইসলামী গ্রুপ, যাদের সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
গত অক্টোবরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের একটি আদেশ অনুযায়ী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম প্রধান শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করে।
২০১৩ সালের আগস্টে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক চাঁদপুরী ও অপর ২৪জনের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষাপটে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।
এ পিটিশনে তারা বলেন, জামায়াত একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।