Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা নদী রক্ষা কমিটি সভা

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ৯ই ফেব্রুয়ারী বিকাল ৩টায় জেলা নদী রক্ষা কমিটির মাসিক সভা জেলা প্রশাসক জিনাত আরা’র সভাপতিত্বে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শেখ আলাউদ্দিন আলী বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোঃ আজাদ রহমান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান.এ শামীম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মহল আশরাফী, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ.এম রকিব হায়দার, এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু ও বিটিভির জেলা প্রতিনিধি মোঃ সানাউল্লাহ প্রমুখ।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ মানোয়ার হোসেন মোল্লা, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর(এনডিসি) মোঃ আরিফুল হক মৃদুল, জেলা প্রশাসনেরে সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ কমিটির সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় রাজবাড়ী শহর রক্ষা প্রকল্প(ফেস-২) এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গৌরপদ সূত্রধর।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের অন্য জেলার তুলনায় রাজবাড়ী জেলা একটু আলাদা। কারণ এই জেলা নদী ভাঙ্গন কবলিত জেলা হিসেবে স্বীকৃত। সেই জন্য এই জেলার নদী কেন্দ্রীক যে কোন উন্নয়ন কাজ করার আগে তার উপর একটি গবেষণা করা প্রয়োজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের ফেস-২ প্রকল্পের যে কাজ করা হবে সেটি রাজবাড়ী জেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে এই প্রকল্প করার আগে প্রকল্পের খুটিনাটি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। এখানে এই প্রকল্প সম্পর্কে যে বিষয়গুলো পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হল সেটি থেকে পরিস্কার কোন ধারণা পাওয়া যায় নাই। প্রকল্পটি জানুয়ারী মাসে শুরু হওয়ার কথা থকলেও সেটি এখনও একনেকে অনুমোদিত হয় নাই। প্রকল্প সম্পর্কিত প্রেজেন্টেশনে নদী ভাঙ্গন এলাকার ভাঙ্গন কবলিত স্কুল বা অন্য যে স্থাপনা প্রাথমিকভাবে এবারের বন্যা মৌসুমে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে সেগুলোর যে স্থির চিত্র দেখানো হয়েছে তা এই প্রকল্প অনুমোদিত হতে হতে আদৌ রক্ষা করা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। সার্বিক দিক বিচারে দেখা যায়, জেলা শহরকে বন্যা ও ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সদিচ্ছার অনেক অভাব রয়েছে। শুধু সেটাই নয় এই প্রকল্প গ্রহনের ক্ষেত্রে তার কোন গুরুত্বপূর্ণ এ্যাকশন প্লান তৈরী করে কাজ করেন নাই বা পার্শ্ববর্তী জেলায় অবস্থিত নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের(আরআরআই)-এর সাথে কোন আলাপ-আলোচনা বা সহায়তা নেন নাই। যা নিঃসন্দেহে খুবই দুঃখজনক। সর্বোপরি পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গন কবলিত অঞ্চলে কিছু স্থাপনা রক্ষা করতে পারলেও যদি এগুলো স্থায়ী রক্ষা করতে না পারে তবে এক্ষেত্রে সরকারী টাকারই অপচয় হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই প্রকল্প গুরুত্ব সহকারে বাস্তবায়নের জন্য তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবাহী প্রকৌশলীকে তার সাথে যোগাযোগ করাতে বলেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বক্তব্যে নদীর জলমহাল থেকে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানার পর বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার ব্যাপারে আজকে সভায় যে বিষয়গুলো এসেছে সেগুলোর প্রতিটি বিষয় পয়েন্ট আকারে নোট করা হয়েছে। এই বালু পরিবহনের জন্য রাস্তায় যে দশ চাকার ট্রাক বেআইনীভাবে চালিয়ে রাস্তার ও অবৈধ বলগেট চালিয়ে নদীর ক্ষতি করা হচ্ছে সে বিষয়গুলো অবশ্যই জেলা প্রশাসক জেলা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে বন্ধ করবে। রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা মোতাবেক বালু উত্তোলন, রাস্তা দিয়ে দশ চাকার ট্রাক চলাচলসহ সভায় উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট আমার কাছে পাঠাবেন। যার আলোকে ভবিষতে এ বিষগুলোর আলোকে কি কি করণীয় সেটা নির্ধারণ করা হবে ও প্রয়োজনে দোষীদের কাছ থেকে ডেমারেজ আদায় করা হবে বলে উল্লেখ করেন। এছাড়াও তিনি জেলাবাসী সকলকে জেলার নদী, খাল ও জলাশয় রক্ষা, মাছের প্রজননের জন্য অভয়ারণ্য তৈরী, জেলার জেলে সমাজকে সাবলম্বী করে তোলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান। সভায় নদী রক্ষা কমিটির আজকের মিটিংয়ের আলোচনার বিষয়গুলো কতটুকু কার্যকর হয়েছে সে বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী সভায় আলোচনা করা হবে বলে জানান।
এছাড়াও সভায় অন্যান্য বক্তগণ অবৈধ বালু উত্তোলন, রাস্তায় বালু পরিবহনে অবৈধ দশ চাকার ট্রাক চালাচল বন্ধ, নদীতে অবৈধ বলগেট চালচল বন্ধ, মরা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য পুনরায় খনন, নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ, পদ্মা পাড়ে ইকো পার্ক নির্মাণ, জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকারী সহযোগিতা প্রদানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন।
আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ আতাহারুল ইসলাম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে জাতীয় নদী রক্ষা কমিটির সদস্য ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শেখ আলাউদ্দিন আলীকে পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী জেলা ব্রান্ডিং লোগো সম্বলিত উপহার প্রদান করেন।