॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ীতে সরকারী কাজে বাঁধা ও দুই পুলিশকে মারপিট করে আহত এবং ক্ষতি সাধন করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপির ২৭জন নেতাকর্মী হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও গতকাল ২০শে নভেম্বর অপর মামলায় তাদেরকে শোন এ্যারেষ্ট দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিএনপি নেতৃবৃন্দের আইনজীবী এডভোকেট নেকবর হোসেন মনি জানান, গত ১৩ই নভেম্বর ক্রিমিনাল মিস কেস নং-৫১৬৯১ মূলে হাইকোর্ট বিএনপির ২৭জন নেতাকর্মীকে ৬মাসের জন্য অন্তবর্তীকালীন জামিন প্রদান করেন। গতকাল ২০শে নভেম্বর হাইকোর্টের জামিনের কাগজপত্র রাজবাড়ীতে আসে। কিন্তু আদালত অপর একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদেরকে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।
সূত্র জানয়, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নামে রাজবাড়ী শহরে বিভিন্ন যানবাহনের গ্লাস ও গাছপালা ভাংচুর, চালকদের নগদ টাকাসহ মোবাইল ছিনতাই, সরকারী কাজে বাঁধা এবং দুই কনস্টেবলকে মারপিট করে আহত করার ঘটনায় অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। গত ১২ই আগস্ট এস.আই আবু শহীদ বাদী হয়ে রাজবাড়ী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। রাজবাড়ী থানার মামলা নং-১১। ধারাঃ ১৪৭/৩৪১/৩৩২/৩৫৩/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোর্ড।
আদালত সুত্র জানায়, সরকারী কাজে বাঁধা ও দুই পুলিশকে মারপিট করে আহত এবং ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায়(রাজবাড়ী থানার মামলা নং-১৪, তাং-৯/৯/২০১৮ইং, ধারাঃ ১৪৩/৩৩২/৩৫৩/৩২৩/৪৪৭ পেনাল কোর্ড, জি.আর-৪২১/২০১৮) গত ৩১শে অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে বিএনপির ২৭জন নেতাকর্মী রাজবাড়ীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনা করলে বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে হাইকোর্ট থেকে তারা জামিন পান। জামিনের কাগজ গতকাল ২০শে নভেম্বর রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে আসে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১২ই আগস্ট তারিখের ১৪৭/৩৪১/৩৩২/৩৫৩/৩৭৯/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোর্ড ধারায় রাজবাড়ী থানার ১১নং মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার বাদী এস.আই আবু শহীদ। আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদন মঞ্জুর করে এ মামলায় তাদেরকে কারাগারে আটক রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।ৎ
এ মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ঠা আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজবাড়ী শহরের পান্না চত্ত্বর এলাকায় ইউ মার্কেটের সামনে স্কুল ড্রেসে ছাত্র-ছাত্রীরা ও সাদা পোষাকে কতিপয় যুবক এবং বিভিন্ন বয়সের উশৃঙ্খল জনতা ১৫০ থেকে ২০০জন মিলে পরিকল্পিতভাবে ১নং রেলগেটের দিকে লাঠিশোঠা লোহার রডসহ দৌড়াইয়া সরকার বিরোধী বিভিন্ন উত্তেজনাকর শ্লোগান দিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের চালকদের গতিরোধ করে। এ সময় তারা অতর্কিতভাবে হামলা করে যানবাহন ভাংচুর করে এবং বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশী করে।
এছাড়াও তারা রাস্তার মাঝখানের আইল্যান্ডে থাকা বিভিন্ন গাছপালা ভাংচুর করে ক্ষতি সাধান করে। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করলে আবারো তারা যানবাহনে তল্লাশী ও ভাংচুর কাজে লিপ্ত হয়ে চালক ও যাত্রীদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল, নগদ ২৫হাজার ২শ টাকা ছিনিয়ে নেয়। তাদেরকে বাঁধা প্রদান করতে গেলে তারা কনস্টেবল ফায়েকুজ্জামান ও আলমগীরের শার্টের কলার চেপে ধরে বোতাম ছিড়ে ফেলাসহ তাদেরকে মারপিট করে।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা ৩/৪টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজবাড়ী সরকারী মহিলা কলেজের সামনে, রাজবাড়ী কোর্টের প্রবেশদ্বারের রাস্তায় ও বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন থামিয়ে তল্লাশী ও যানবাহনের সামনের গ্লাসে বিভিন্ন শ্লোগান লেখে। এসব কর্মকান্ডে পথচারী ও সাধারণ লোকজন আতংকগ্রস্ত হয়ে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করলে এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার ৮দিন পর রাজবাড়ী থানার এস.আই আবু শহীদ মামলাটি দায়ের করেন।
এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জেল হাজতে থাকা বিএনপির ২৭জন নেতাকর্মীকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এ মামলায় যাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তারা হলেন ঃ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম ওরফে রফিকুল ইসলাম ফারুক, যুগ্ম-সম্পাদক এ মজিদ বিশ^াস, আকমল হোসেন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আতাহার হোসেন তকদির(খানগঞ্জ ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান), তাঁত ও মৎস্যজীবি ও উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি, জেলা বিএনপির সদস্য বেলায়েত হোসেন(দাদশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান), খোন্দকার ফারুকুল ইসলাম ওরফে ফারুক, গোলাম মতুর্জা, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কে.এ সবুর শাহিন, পৌর বিএনপির সভাপতি এবিএম মঞ্জুরুল আলম দুলাল, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোবাইদুল ইসলাম মিরাজ, জেলা যুবদলের সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি, প্রচার সম্পাদক ইন্তে খাবুল ইসলাম রাজু, যুবদল নেতা আব্দুল খালেক, জেলা তরুন দলের সভাপতি এসএম কাউছার মাহমুদ, মিজানুর রহমান মামুন, আনিস পাটোয়ারী, মজিবর রহমান, আলী আহম্মেদ আরজু, মইনুল হক মৃধা মিলন, কাজী আজাদ হোসেন আজাদ, আরিফুর রহমান শামীম, খালিদ হাসান মুহাম্মদ হাফিজ ওরফে মোঃ হাসান, শাহিদুল ইসলাম ওরফে সহিদুল, লতিফ সরদার ওরফে আব্দুল লতিফ ও খায়রুল ইসলাম জনি।