Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষে রাজবাড়ীতে এ্যাডভোকেসি সভা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ আগামী ২৪-২৯শে নভেম্বর পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ উপলক্ষে “প্রতিষ্ঠানিক ডেলিভারী বৃদ্ধি করি, প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি নিশ্চিত করি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আয়োজনে গতকাল ২০শে নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টায় এ্যাডভোকেসি সভা ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা কমিটির মাসিক সভা কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্টিত হয়।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম, বানীবহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মোস্তফা বাচ্চু, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি নেফাজ উদ্দিন, এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেবা ও প্রচার সপ্তাহের কার্যক্রমের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোঃ আজম।
এ সময় জেলা পরিবার পরিকল্পনা কমিটির সদস্যগণ, অ্যাডভোকেসী সভায় অংশগ্রহণকারী আমন্ত্রিত অতিথিগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, সরকারী সিন্ধান্ত মোতাবেক আগামী ২৪-২৯শে নভেম্বর সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ীতে পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ পালন করা হবে। তারই অংশ হিসেবে যারা এই সেবা সপ্তাহের সাথে জড়িত তাদেরকে নিয়ে আজকে এই এ্যাডভোকেসি সভার আয়োজন করা হয়েছে। এই সেবা সপ্তাহের মাধ্যমে জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বিভিন্ন উপজেলায় ও ইউনিয়নে তাদের দক্ষ কর্মীদের মাধ্যমে জরুরী প্রসূতি সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রসব পরবর্তী পরিকল্পনা সেবা, গর্ভবতীর সেবা, নবজাতক ও শিশু সেবা, কৈশোরকালীন প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে বিভিন্ন সেবাসহ জনগণকে এই সমস্ত বিষয়ে সচেতন করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চলবে। যার মাধ্যমে সরকারের ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের বিভিন্ন বিষয় অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব হবে। আমি আশা করি জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে এই পরিবার কল্যাণ সেবা ও প্রচার সপ্তাহ সফল হবে।
তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, রাজবাড়ী জেলায় কিছুদিন আগে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন পদে বেশ কিছু লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোন রকম সুপারিশ ছাড়া যোগ্যতার ভিত্তিতে অত্যন্ত স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এদেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এদের অনেকে যোগদানের পর তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভবে পালন করছে না। এক্ষেত্রে যদি কেউ মনে করে তাদের যোগ্যতার তুলনায় নিয়োগপ্রাপ্ত পদবী ছোট বা অন্য কোন ভালো জায়গায় নিয়োগ পেলে চলে যাবে এর জন্য দায়িত্বের প্রতি গুরুত্বহীনতা তাহলে তার চাকুরী করার প্রয়োজন নাই। এক্ষেত্রে তিনি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা জনিত কারণে কোন প্রকার ছাড় প্রদান না করার নির্দেশ প্রদান করেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী জেলায় বাল্য বিবাহ পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার কাছে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে এই বাল্য বিবাহের অভিযোগ আসছে। আর এই বাল্য বিবাহের কারণে কিছুদিন আগে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার অনেক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আমাদের সকলের জানা উচিত পূর্বে বাল্য বিবাহ রোধ আইন-২০১৭ অনুযায়ী বাল্যবিবাহ বন্ধে শুধু অভিভাবক ও বাল্য বিবাহের সাথে সংশ্লিষ্টদের বুঝিয়ে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা হতো। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা বা অভিযুক্তদের শাস্তির কোন বিধান ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সেই আইন সংশোধন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও শাস্তির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী এখন থেকে বাল্য বিবাহ বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে।
এছাড়াও সভায় পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি সেবা প্রদান, প্রতিবন্ধী কর্মচারীদের সহযোগিতা প্রদান, পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিতভাবে কাজ করাসহ পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
উল্লেখ্য, এই ২টি সভা ছাড়াও কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা কৃষি ঋণ কমিটির সভা, দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা এনজিও সমন্বয় কমিটির সভা, দুপুর ১টায় জেলা ভিক্ষুক পুনর্বাসন কমিটির সভা, বিকাল সাড়ে ৩টায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত সমিতির অনুদানের আবেদন বাছাই কমিটির সভা এবং বিকাল ৪টায় রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১ ও লালভবন অকেজো ঘোষণা সংক্রান্ত কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোর সদস্যগণ এতে অংশগ্রহণ করেন।