॥বালিয়াকান্দি প্রতিনিধি॥ শীত আসলেই গাছিরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার গাছিরাও শীত মৌসুমের প্রাক্কালে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ছ্যানদা, ঠুঙ্গি, দড়ি ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে তারা রস সংগ্রেহের জন্য খেজুর গাছ পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
নবাবপুর ইউনিয়নের কঠুরাকান্দি গ্রামের গাছি আশু শেখ বলেন, ১৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে আসছি। শীত আসার প্রথম থেকেই খেজুর গাছের বাগ্রো(ডগা) পরিস্কারের কাজ শুরু হয়। ৭দিন পর প্রথম চাচ দিয়ে থাক তৈরী করে বাঁশের আগা দিয়ে নল বানিয়ে নল বসিয়ে মাটির হাড়ি পেতে রাখা হয়। পরদিন সকালে সেই হাড়ি থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। ৬/৭ দিন পর পর গাছের কাটা অংশ শুকানোর পর আবার কাটি। প্রতিদিন ২০টির মতো গাছ কাটতে পারি। এ বছর এখন পর্যন্ত ১শ’টি খেজুর গাছ ঝুরেছি।
বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের গাছি ইসলাম বলেন, বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে আছি। এ প্রজন্মের সন্তানরা আজকাল আর এই কাজ করতে চায় না। ছ্যান-দা, মাটির হাড়ির দামও তুলনামূলকভাবে বেশী।
কামার ভরত কুমার বলেন, শীত পরার সাথে সাথে খেজুর গাছ ঝুরার জন্য ব্যবহৃত ছ্যানদার চাহিদা বেড়ে যায়। গাছিরা নতুন ছ্যানদা তৈরী ও পুরাতন ছ্যানদাগুলো মেরামত করতে আসছে। বর্তমানে লোহা ও কয়লার মূল্য বেশী হওয়ায় একটি ছ্যান-দা’র মূল্য কমপক্ষে ১২শত টাকা পড়ছে।
চরফরিদপুর গ্রামের শুকুমার পাল বলেন, শীত আসার এক মাস আগে থেকেই আমাদের মাটি সংগ্রহ করতে হয়। এ সময় খেজুরের রসের হাড়ির চাহিদা থাকায় অতিরিক্ত মাটি সংগ্রহ করে থাকি।
দলিল উদ্দিন শেখ নামের একজন বলেন, একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর খেজুর গাছ দেখা যেত। কেটে ফেলার কারণে আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা অনেক কম। তবে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে এখন খেজুর গাছ রোপণ করা হচ্ছে। স্বাদ ভালো হওয়ায় এই এলাকার খেজুরের রসের চাহিদাও বেশী। শীতকালে খেজুর রসের ভিজা পিঠা, ক্ষির, পায়েস, ভাপা পিঠা, পাটালী গুড় এ অঞ্চলের প্রতিটি পরিবারের নিত্যসঙ্গী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার খেজুরের রস ও গুড় বাইরেও যায়।