Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

গোয়ালন্দ থানা পুলিশের সাফল্য॥দৌলতদিয়ার ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক মঞ্জু হত্যার রহস্য উদঘাটন॥জড়িত ৫জন গ্রেফতার

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলের চালক মঞ্জু হত্যাকান্ডের ১৭দিনের মধ্যে হত্যাকান্ডে জড়িত ৫জন আসামীকে গ্রেফতার করাসহ ছিনতাইকৃত মোটর সাইকেল উদ্ধার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি পুলিশ উদ্ধার করেছে।
গতকাল ১৩ই নভেম্বর দুপুরে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফী সাংবাদিকদের নিকট মঞ্জু হত্যার রহস্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গত ৯ই নভেম্বর রাতে দৌলতদিয়া থেকে সোহরাব মন্ডল পাড়ার সুলতান মৃধার ছেলে মুঞ্জু হত্যায় জড়িত শাহাদত মৃধা ওরফে লাভলু মৃধা (২৮)কে গ্রেপ্তার করে। ধৃত লাভলু মৃধা মোটর সাইকেল চালক মুঞ্জু হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন রাতে পুলিশ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে আনছার মেম্বার পাড়ার আক্কাছ শেখের ছেলে কোবাত শেখ (২০)কে গ্রেপ্তার করে। কোবাতও আদালতে স্বীকারোক্তি জবানবন্দি দেয়। তাদের তথ্যে হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মনোয়ার হোসেন মোল্যা ওরফে মনু (২০)কে গত ১২ই নভেম্বর ভোরে চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডু থেকে গ্রেপ্তার করে। ওইদিন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে পুলিশ ঘাতক রিপন সরদার (২৬)কে গ্রেপ্তার করে। রিপনের দেওয়া তথ্যে গতকাল ১৩ই নভেম্বর সকালে খোয়া যাওয়া মুঞ্জুর মোটর সাইকেলসহ আরেক পরিকল্পনাকারী রুবেল বেপারী (২৮)কে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে দৌলতদিয়া সানাউল্লাহ পাড়ার ফিরোজ বেপারীর ছেলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, মুঞ্জু শেখ কয়েক মাস আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক লাখ টাকায় কালো রঙের ১২৫সিসির বাজাজ ডিসকভার মোটর সাইকেলটি কিনেন। এই মোটর সাইকেলটি তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মোটর সাইকেলটি হাতিয়ে নিতেই মনোয়ার হোসেন মাত্র ২৫হাজার টাকায় চুক্তি করে। পরিকল্পনা মতো ইলিশ মাছ কেনার কথা বলে ২৬শে অক্টোবর রাতে দৌলতদিয়ার আইনদ্দিন বেপারী পাড়ার পদ্মা নদীর খালের কাছে নিয়ে যায়। সেখানে রুবেল ছাড়া বাকি চারজন তাকে হাত ও পা চেপে ধরে একটি ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করে চাকুসহ লাশটি খালে ফেলে যায়। মুঞ্জু জীবন বাঁচাতে রিপন ও মনোয়ারের হাতে কামড় বসিয়ে দেয়। শাহাদত ও কোবাতের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাদের সাথে নিয়ে পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকুটি ১১ই নভেম্বর রাতে খাল থেকে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মামলার বাদী ও গ্রামবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এর আগে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে গোয়ালন্দ পৌরসভার বালিয়াডাঙ্গি গ্রামের আব্দুর রহমান মোল্যার ছেলে রেজাউল মোল্যা(২৯) ও মানিকগঞ্জ হরিরামপুর থেকে গোয়ালন্দ পৌরসভার বিজয় বাবুর পাড়ার ননী গোপাল সাহার ছেলে সুমন কুমার সাহা (২৫)কে গ্রেপ্তার করে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি এজাজ শফী বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতায় ঘাতকদের শনাক্ত করেই ১৭দিনের মধ্যেই সকল ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের রাজবাড়ীর আদালতে প্রেরণ করা হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭শে অক্টোবর দৌলতদিয়া আইন উদ্দিন ব্যাপারী পাড়ার খাল থেকে থানা পুলিশ মঞ্জুর(২৮) এর লাশ উদ্ধার করে। সে উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের রহমান ফকির পাড়ার কৃষক বাবলু শেখের ছেলে। নিহত মুঞ্জু বাড়ির কাছে চর দৌলতদিয়া হামিদ মৃধার হাট থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত মোটর সাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী আনা নেওয়া করতো। ঘটনার একদিন পর মঞ্জুর বাবা বাবলু শেখ বাদী হয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।