॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা গতকাল ১১ই নভেম্বর সকাল ১০টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, রাজবাড়ী সরকারী আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর দিলীপ কুমার কর, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন, জেলা জাসদের(ইনু) সভাপতি আহমেদ নিজাম মন্টু, নারী নেত্রী এডঃ দেবাহুতি চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোহাম্মদ আশেক হাসান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম, উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, গত ৮ই নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ২জন বিভাগীয় কমিশনার ও ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসককে রিটার্নিং অফিসার এবং সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন করায় ইতিমধ্যে নির্বাচনের সকল কর্মযজ্ঞ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য স্থানীয় পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি জারী করা হয়েছে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ১৯শে নভেম্বরের পর ২২শে নভেম্বর বেলা ১১টায় রাজবাড়ী-১ আসনের ও বেলা ১২টায় রাজবাড়ী-২ আসনের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র জেলা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে বাছাই শেষে দলীয় প্রার্থীদের জন্য দলীয় প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত প্রতীক থেকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। প্রতীক বরাদ্দের পরই কেবল নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে।
তিনি বলেন, আমি আশা করবো নির্বাচনী কার্যক্রমের সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী জনপ্রতিনিধিগণসহ সর্বোপরি জেলার সকল নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলায় একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করাসহ নির্বাচনী কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে জেলা পুলিশ মূল দায়িত্ব পালন করবে। তাদেরকে সহযোগিতা করবে আনসার-ভিডিপি বাহিনী। এছাড়াও সহায়ক বাহিনীর স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। মূলতঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা কোন সরকারী কর্মকর্তার একার দায়িত্ব নয়।নির্বাচনকে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ করা রাজবাড়ী-১ ও রাজবাড়ী-২ আসনের সকল নাগরিকের দায়িত্ব বলে আমি বিশ্বাস করি। আর সেই লক্ষ্যে সকলকে নির্বাচনকালীন সময়ে আচরণবিধি মেনে চলাসহ যার যার উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজবাড়ীর বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকটি বেওয়ারিশ অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার হয়েছে। এই লাশগুলো অন্য জেলা থেকে হত্যাকান্ডের পর রাজবাড়ীতে এনে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ধরনের ঘটনা রোধকল্পে জেলা পুলিশ কাজ করছে। কিছুদিন পূর্বে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শেষ হয়েছে। এই অভিযানে ১৩০টি মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ৫১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড প্রদান করাসহ ৫০৭জনকে জরিমানা করা হয়েছে। যা সারা বাংলাাদেশের মধ্যে কারাদন্ড প্রদানের দিক থেকে দ্বিতীয়। মা ইলিশ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, মৎস্য বিভাগ, জেলা পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ যারা নিরলসভাবে কাজ করার মাধ্যমে অভিযানকে সফল করেছে জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে তাদের এই অভিযান সফল করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বীকৃতিপত্র প্রদান করা হয়েছে। রাজবাড়ীর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চোরাই পথে আনা বিদেশী পণ্য বিক্রি হলেও জেলা কাস্টমস বিভাগ কোন অভিযান পরিচালনা করে না। আমি আশা করবো বিষয়টি নিয়ে তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ভবিষ্যতে অভিযান পরিচালনা করবে।
পুুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। মাদক-সন্ত্রাস নির্মূল, অস্ত্র উদ্ধার, সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতারের মতো পুলিশের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি নির্বাচন উপলক্ষে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে পুলিশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় ভালো রয়েছে। আশা করা যায়, নির্বাচনকালীন সময়ে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় যে সকল হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে সেসকল হত্যাকান্ডের মোটিভ উন্মোচনসহ অনেক আসামী শনাক্ত হয়ে ধরা পড়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই এই সকল হত্যাকান্ডের চার্জশীট প্রদান করা সম্ভব হবে। আর জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে যেসকল লাশ উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে যেগুলোর পরিচয় পাওয়া গেছে সেগুলো এ জেলার নয়। এদের মধ্যে ২টি লাশ অর্ধগলিত বিকৃত অবস্থায় পাওয়ার কারণে শনাক্ত করা এখনো সম্ভব হয়নি। যেগুলো শনাক্ত করা গেছে সেগুলো পারিবারিক ও বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কারণে হত্যার পর লাশ এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। তারপরও এই সকল হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচনে জেলা পুলিশ অন্যান্য জেলার সাথে সমন্বয় করে কাজ করছে। রাজবাড়ীতে যে দু’একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে সে ক্ষেত্রে গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দেখা গেছে একজন রাজবাড়ী জেলার, তার সাথে আরও যারা জড়িত তারা অন্য জেলার। তিনি এই ধরনের চুরির ঘটনা রোধে অন্ধকারাচ্ছন্ন বাড়ীর সামনে বাতির ব্যবস্থা করাসহ পুলিশের পাশাপাশি এলাকা ভিত্তিক সমিতি গঠনের মাধ্যমে পাহারার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
এছাড়াও সভায় দৌলতদিয়া ফেরী ঘাটের যানজট নিরসন, পৌরসভা কর্তৃক পাইপ লাইন পুনঃ স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা, সকল রাস্তায় বাতির ব্যবস্থা, এনএসআই’র ডিডি কর্তৃক উত্থাপিত ইউএনওদের মাধ্যমে সকল ইউনিয়নে সন্ত্রাস-নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রম সক্রিয় করা, রেল পুলিশ কর্তৃক ট্রেনে অভিযান পরিচালনাসহ মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ ও আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।