Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়ায় মুক্তিপন দিয়ে অপহৃত স্কুলছাত্র রিপন দুর্গম চর থেকে উদ্ধার

॥আবুল হোসেন॥ রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার রিপন ফকির(১৬) দুর্বৃত্তদের হাতে অপহরণের দুইদিন পর গত শনিবার দিবাগত মধ্যরাতে টাকার বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছে। সে দৌলতদিয়ার ৫নং ওয়ার্ড ছোরাপ মন্ডলের পাড়ার রমজান ফকিরের ছেলে ও দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র।
গতকাল ৬ই ফেব্রুয়ারী বিকেলে অপহৃত স্কুলছাত্র রিপন ফকির জানায়, গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ি থেকে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দৌলতদিয়া ঘাট রেলস্টেশন সংলগ্ন পাবনা-বেড়া বোর্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। সন্ধ্যার দিকে বোর্র্ডিং বন্ধ করে দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি তার মুখে রুমাল দিলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরদিন শনিবার দুপুরের দিকে জ্ঞান ফিরে আসলে একটি ছোট্র খুপড়ি অন্ধকার ঘরে নিজেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় দেখতে পায়। ওই দিন মধ্যরাতে একটি বন থেকে তার বাবা নিয়ে আসে। এর আগে দুর্বৃত্তরা তাকে মারধরও করে। সে দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী হাই স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়াশুনা করে এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় শিশু সংসদের নির্বাচিত সদস্য সচিব।
সে অভিযোগ করে, বেশ কিছুদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আপন চাচাদের বিরোধ চলছে। অপহরণের ২/৩দিন আগে তার আপন ছোট চাচা কাসেম ফকির ও সেজ চাচা হাসেম ফকির তাকে মারধর করে।
রিপনের বাবা রমজান ফকির অভিযোগ করেন, দৌলতদিয়া স্টেশন এলাকার একটি বাড়ি নিয়ে ছোট ভাই কাসেম ফকির ও হাসেম ফকিরের সাথে বিরোধ চলছে। গত ৭/৮দিন আগে তারা আমাদেরকে মারধরও করে। গত শুক্রবার বিকেলে রিপনকে বোর্ডিংয়ের উদ্দেশ্যে পাঠালে সন্ধ্যায় এসে তা বন্ধ পান। রাত ৮টার দিকে রিপনের ফোন থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি রিপন অপহরণের কথা জানায়। পরদিন দুপুরে ফোনে রিপনকে বাঁচাতে চাইলে তিন লাখ টাকা দাবী করে। তাদের সাথে দুই লাখ টাকায় আপোষ হয়। বিনিময়ে রিপন ও যারা তাদের(দুর্বৃত্ত) দিয়ে অপহরণ করেছিল তাদের কথপোকথন রেকর্ডকৃত মেমোরিকার্ড দেয়ার কথা বললে গত শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তারমোড় দুর্গম বনায়নের যাই। সেখানে অজ্ঞাত তিন মুখোশধারী ব্যক্তি দুই লাখ টাকা দিয়ে তাদের দেখিয়ে দেয়া বন থেকে হাত বাঁধা অবস্থায় রিপনকে উদ্ধার করে বাড়ি আসি। পরে তাদের দেওয়া মেমোরিকার্ডে ভাষ্য অনুযায়ী বুঝতে পারি আপন ছোট দুই ভাই হাসেম ও কাসেম প্রতিশোধ নিতে টাকার বিনিময়ে রিপনকে তুলে নেয়। কিন্তু সময়মতো টাকা না পাওয়ায় দুর্বৃত্তরা তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে রিপনকে ফিরিয়ে দেয়।
দৌলতদিয়া আক্কাছ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন জানান, রিপন বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের দশম শ্রেনীতে পড়াশুনা করে। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে তারই আপন চাচারা লোকজন দিয়ে রিপনকে অপহরণ করে বলে শুনেছি।
এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত হাসেম ফকির ও কাসেম ফকির আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মির্জা আবুল কালাম আজাদ জানান, এ সংক্রান্ত বিষয় ওই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুনেছি ভাই-ভাইয়ের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধ চলছে।