॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের শোলাকুড়া নামক স্থানে ট্রেনের ধাক্কায় রাজ্জাক জুট এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ৪জন শ্রমিক নিহত এবং ৮জন শ্রমিক আহত হয়েছে।
নিহতরা হলো ঃ বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে বাঘুটিয়া গ্রামের এলেম সরদারের ছেলে গাড়ীর হেলপার ইমরান শেখ, শহিদুল শেখের ছেলে সরোয়ার, শুকুর আলীর ছেলে সাকিল, হানিফ মৃধার ছেলে ফজলু মৃধা(৩৫)।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২দিকে রাজ্জাক জুট মিলের শ্রমিক বহনকারী ৪নং পরিবহন ১৪জন শ্রমিক নিয়ে শোলাকুড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন(সুফির বাড়ীর মোড়ে) রেললাইন অতিক্রম করার সময় কালুখালী হতে ভাটিয়াপাড়া গামী ট্রেনের সাথে সংঘর্ষ হয়। তখন ট্রেনের গতিরোধ করলেও শ্রমিক বহনকারী পরিবহনটি ট্রেনের সাথে প্রায় ৫শত মিটার ছেচড়ে গিয়ে পরে। এ সময় ওই গাড়ীতে থাকা শ্রমিকদের অনেকেই দুরে ছিটকে পড়ে। তখন ট্রেনে কেটে এবং ধাক্কায় ৩জন শ্রমিক নিহত এবং হাসপাতালে নেওয়ার পরে আরো ১জন মারা যায়। আহতদের ফরিদপুর হাসপাতালসহ বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৪জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানাগেছে।
দূর্ঘটনায় আহত শ্রমিক জামালপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হারুন শেখের স্ত্রী পপি(৩৫) জানান, গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে জুট মিল থেকে ছেড়ে আসা রাজ্জাক জুট মিলের শ্রমিক পরিবহনের ড্রাইভার জামালপুর বাজারে এসে গাড়ী তার হেলপাড়ের দিয়ে চালায়। গাড়ী জামালপুর সুফির বাড়ীর মোড়ে রেললাইন অতিক্রম করার সময় আমিসহ অন্য শ্রমিকরা বাঁধা দিলে গাড়ীর হেলপার আমাদের কথা না মানায় ট্রেনের সাথে সংঘর্ষে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দূর্ঘটনা কবলিত গাড়ীটি স্যালো ইঞ্জিন চালিত গ্রাম বাংলা(কটাং গাড়ী) অবৈধ একটি যানবাহন। এই গাড়ীর কোন রেজিস্ট্রেশন এবং চালকের কোন লাইসেন্স নেই। জুট মিল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে “ম্যানেজ” করে সড়কে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরেনের কয়েকটি গাড়ীতে শ্রমিক পরিবহন করে আসছে।
নিহত সরোয়ার শেখের ফুপা মোঃ সুমন শেখ জানান, সরোয়ার এসএসসি পরীক্ষার মডেল টেষ্ট পরীক্ষা দিয়েছে এর মাঝে ও জুট মিলে কাজ করতো আর পড়ালেখা করতো। সে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলো।
এ সময় নিহত ইমরান সরদারে ভাই আছাদুল সরদার জানান, ইমরান গাড়ি চালক ছিল ও দুই তিন বছর গাড়ি চালাচ্ছে। ৬/৭ মাস হলো বিয়ে করছে বলেই কান্না শুরু করে দেন।
এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে ২৫হাজার করে টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ আলমগীর হোছাইন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম রেজা, বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ উপস্থিত ছিল।
বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল কমির স্থানীয়দের পক্ষে বিনা ময়না তদন্তে মৃতদেহ দাফনের অনুমতি চাইলে জেলা প্রশাসক জিআরপি থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ আনুছুর রহমানকে বলেন, আপনারা অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে বিনা ময়না তদন্তেরের অনুমতির সুপারিশ করা করলে জেলা প্রশাসন সেক্ষেত্রে বিনা ময়না তদন্তে মৃতদেহ দাফনের অনুমতি প্রদান করবে।
এ ঘটনায় পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজ্জাক জুট মিলের মালিক ওবাদুর রহমান খান জানান, নিহতের পরিবার ও আহতের পরিবারকে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হবে।
এদিকে বহরপুর ইউনিয়নের বাঘুটিয়া গ্রামে ৪জনের মৃত্যুর পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এ ঘটনায় প্রতিবছর বাঘুটিয়া বাজারে সনাতন ধর্মালম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বিসর্জন উপলক্ষ্যে মেলার আয়োজন করলেও স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় নিহতের ঘটনায় শোক জানিয়ে মেলা বন্ধ করে দেয়।