Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

দৌলতদিয়ায় বেপরোয়া বাসের চাপায় দুই মেধাবী ছাত্রী নিহত॥সড়ক অবরোধ॥অগ্নিসংযোগ

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ দৌলতদিয়া-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের দৌলতদিয়া মডেল হাইস্কুলের সামনে গতকাল ১৩ই অক্টোবর দুপুরে পৌনে দুইটার দিকে যশোরগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলে নবম শ্রেণীর চাঁদানী আক্তার(১৫) নিহত এবং একই শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী জাকিয়া আক্তার কেয়া(১৫) গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মারা গেছে।
নিহত চাঁদানী আক্তার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের যদু ফকির পাড়ার ছালাম প্রামানিকের মেয়ে এবং জাকিয়া আক্তার কেয়া ওই ইউনিয়নের ওমর আলী মোল্যার পাড়ার জামাল বেপারীর মেয়ে। তারা ২জনই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়।
এ ঘটনায় কয়েক’শ বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনতা মহাসড়ক অবরোধ করে ফেরীর জন্য অপেক্ষমান ছয়টি যাত্রীবাহি বাস ভাংচুর করে। এ সময় মহাসড়কে কয়েক শত গাড়ী আটকা পড়ে। ভাংচুরকালে পূর্বাশা পরিবহনের চালক চুয়াডাঙ্গা জেলার ইসরাইল মল্লিক গুরুতর আহত হয়। তাকে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভতি করা হয়েছে। একই সাথে ঢাকাগামী সময়ে বিক্ষুব্ধ জনতা গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন বাস যাত্রী আহত হন।
খবর পেয়ে রাজবাড়ী থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় বাসের আগুন নেভায়। গোয়ালন্দ ঘাট থানা এবং রাজবাড়ী পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়কে একটি ওভার ব্রিজ ও গতিরোধকের দাবী জানালে পুলিশ এবং উপজেলা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশ^াসের প্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নিলে বিকেল ৪টা থেকে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিকেলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিহতের পরিবারবর্গকে সান্তনা দেন।
মহাসড়ক অবরোধের কারণে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার পর বৃষ্টির মধ্যে বাস যাত্রীরা দীর্ঘপথ পায়ে হেটে গন্তব্যে পৌছেন।
এ সময় উপস্থিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাকিবুল হাসান শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলীকে ঘাতক বাসসহ চালককে যশোর থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, ঘাতক বাস চালকের উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যাতে সব ধরনের সহযোগিতা পায় সে ব্যবস্থা তিনি করবেন। এছাড়া বিদ্যালয়ের সামনে দ্রুত গতিরোধক নির্মাণ ও সবার সচেতনতার জন্য মহাসড়কে বিলবোর্ড বসানোর কথা উল্লেখ করেন।
নিহত চাঁদনীর ভাই ফরিদুল ইসলাম জানান, চাঁদনী ও তার সহপাঠি কেয়া একই অটো রিক্সায় বাড়ী থেকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য স্কুলের সামনে নেমে সড়ক পাড় হচ্ছিল। এমন সময় ঢাকার দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা খুলনাগামী ঈগল পরিহনের একটি বাস তাদের পিছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে তারা গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎক প্রথমে চাঁদনী ও পরে কেয়াকে মৃত ঘোষণা করে।
গোয়ালন্দ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার শাহিদা পারভীন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়া দুই ছাত্রীকে হাসপাতালে আনা হলে কেয়াকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। গুরুতর আহত অপর ছাত্রী চাঁদনীকে সংকটপন্ন অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানোর জন্য এম্বুলেন্সে তোলা হলে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে বাসের ধাক্কায় দুই শিক্ষার্থীর অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসছে।