॥শিহাবুর রহমান॥ স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে আলিম শেখ(৭) নামে প্রথম শ্রেণীর ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পরেও শিশুটির চিকিৎসা না দেয়ায় তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা। এ ঘটনায় শিশুটির স্বজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার লোকজন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোঃ আলী আহসান তুহিনের ওপর চড়াও হোন।
মৃত আলীম শেখ সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আলাদীপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মামুন শেখের ছেলে। সে আলাদীপুর আরসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তো।
জানা যায়, আলাদীপুর আরসি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের খেলার জন্য একটি স্লিপার উপহার দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। স্লিপারটি স্কুলের সামনের একটি ওয়ার্কশপে বানানো হয়। গত শুক্রবার ওই ওয়ার্কশপের লোকজন স্লিপারটি স্কুলে দিয়ে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী স্লিপারটির নিচের অংশ মাটিতে শক্ত করে পুতে বা ইটবালু সিমেন্ট দিয়ে প্লাষ্টার করে রাখার কথা। যাতে সেটি কাত হয়ে পরে না যায়। কিন্তু স্কৃল কর্তৃপক্ষ সেটি মাটিতে না পুতে ওই রকম অবস্থাতেই রেখে দেয়। গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে শিশুরা স্কুলে এসে সেটি দেখতে পেয়ে আনন্দে খেলা শুরু করে। এক পর্যায়ে সেটি কাত হয়ে ওই শিশুটির গায়ের ওপর পড়ে যায়। এতে সে মারাত্মকভাবে আহত হয়। এসময় স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসে। হাসপাতালে ভর্তির প্রায় এক ঘণ্টা পরে শিশুটি মারা যায়।
আলিমের স্বজনরা জানান, আহত আলিমকে হাসপাতালে আনার পর জরুরী বিভাগের ভর্তি স্লিপ, এক্স-রে ও বিভিন্ন অজুহাতে সময় বিলম্ব করে নারী চিকিৎসক মনিজা। ওই সময় তাকে বারবার ডাকলেও তিনি শিশুটিকে দেখতে আসেননি। তিনি মোবাইলে ফেসবুক দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে প্রায় এক ঘণ্টা পর ছটফট করে মারা যায় শিশু আলিম। চিকিৎসকের অবহেলার কারণে শিশু আলিম মারা যায় বলে অভিযোগ করেন তারা। এসময় তারা চিকিৎসক মনিজার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মোঃ আলী আহসান বলেন, ঘটনার সময় আমি হাসপাতালে ছিলাম না। বিষয়টি শুনে হাসপাতালে এসে শিশুটির সব ফাইলপত্র দেখেছি। তার এক্স-রে পরীক্ষায় দেখেছি। সম্ভবত শিশুটির কোমরের হাড় ভেঙে গেছে। সেই সঙ্গে তার পা ও পেটের নিচের অংশ ফুলে যায়। এমন রোগীর চিকিৎসা হলো ভেন্টিলেশন। যা আমাদের এখানে নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে ভেন্টিলেশন নেই। আমাদের হাসপাতালে যদি ভেন্টিলেশন বা আইসিইউ সিস্টেম থাকতো তাহলে আজ শিশুটি মারা যেত না।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমি ইতিমধ্যেই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থাপক ও সিভিল সার্জনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
এদিকে, এ ঘটনার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে স্লিপারটি যদি মাটিতে শক্ত করে পুতে রাখা হতো তাহলে এমন ঘটনা ঘটতো না। অকালেই হারাতো না একটি শিশুর জীবন। এ ঘটনায় দোষী শিক্ষকদেরকেও তদন্ত করে শাস্তির দাবী জানান তারা।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় কুমার বিশ^াস জানান, স্লিপারটি রাজবাড়ীর কোন এক ওয়ার্কশপে বানানো হয় এবং স্কুলের সামনে একটি ওয়ার্কশপে রঙ করা হয়। শুক্রবার বিকেলে ওই দোকানের কর্মচারীরা স্লিপারটি স্কুলে দিয়ে আসে এবং স্লিপারটি তাদেরই সেট করে দিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু তারা সেটি করেনি। গতকাল শনিবার সকালে আমরা স্কুলে এসে স্লিপারটি দেখতে পায়। ওই স্লিপারে খেলার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্লিপার সেট করা হয়নি তাহলে শিশুদের খেলতে দিলেন কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা বুঝতে পারেনি স্লিপারটি পড়ে যাবে।
আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ শওকত হাসান বলেন, ‘স্লিপার খেলনাটি আমি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ওই স্কুলে দিয়েছি। শুক্রবার খেলনাটি স্কুলে নিয়ে রাখা হয় সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টারের পর ক্লাম্প করে ভালোভাবে সেট করার জন্য। আজ-কালের মধ্যেই কাজটি করা হতো। কিন্তু কাজ সম্পন্ন করার আগেই শিশুরা সেটির ওপরে চড়ে খেলা শুরু করে দেয়। যে কারণে অনাকাঙ্খিত এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।’