॥শিহাবুর রহমান॥ গত ইউনিয়ন নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও কেউ যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হয় তাহলে দল থেকে চিরদিনের জন্য তাকে বহিস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে রাজবাড়ীর শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে জেলা আওয়ামীলীগের কর্মী সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আওয়ামীলীগে এখন কর্মীর চেয়ে নেতা বেশী। বাংলাদেশে এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। আমার দরকার কর্মী উৎপাদনের কারখানা। এতো নেতার দরকার নেই। শীতে অতিথি পাখিদের ভীড় হয়। শীত গেলে অতিথি পাখিরাও চলে যায়। আওয়ামীলীগের দুঃসময় এলে এদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনাদের দেখে মনে হয় না এখানে কোন্দল আছে। কিন্তু তলে তলে ঠিকই কোন্দল আছে। আপনারা ঘরের কথা ঘরে বলবেন। ঘরের কথা পরের কাছে বলবেন না। চায়ের দোকানে বসে আওয়ামীলীগ আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কথা বলে। এটা ঠিক না। আপন ঘরে যার শত্রু আছে তার বাইরের শত্রুর প্রয়োজন হয় না।
তিনি বলেন, তিন মাস পর নির্বাচন। উন্নয়নের প্রচার করুন। অপপ্রচার করবেন না। তাহলে দলের ক্ষতি হবে। আওয়ামীলীগ যেন একটা পরিবার। এই পরিবারের যেন ক্ষতি না হয়। শত্রুতা না হয়। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামীলীগের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। যারা নমিনেশন চাচ্ছেন তাদের নমিনেশন চাওয়ার অধিকার আছে। নমিনেশন যারা চাচ্ছেন তাদের সবার আমলনামা শেখ হাসিনার কাছে জমা আছে। কার কি যোগ্যতা সেটা শেখ হাসিনা ভাল করেই যানেন। সব খবর পদ্মা নদী পাড় হয়ে গণভবনে যাচ্ছে। নমিনেশন যে কেউ চাইতে পারে। কিন্তু দলের মধ্যে অহেতুক অসুস্থ প্রতিযোগিতা করবেন না। ধরুন নমিনেশন তো একজন পাবেন। তাকে তো জিততে হবে। প্রার্থীরা দলের লোক। তাকে শত্রু ভাবলে হবে না। তাহলে শত্রুরা আমাদের ক্ষতি করবে।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু তাদের ডাকে জনগণ কি সাড়া দেবে। এমন কোন কাজ তাদের আছে যেটা স্মরণ করে জনগণের কাছে তারা ভোট চাবে। সেটা চাইতে না পেরে তারা বলেন আওয়ামীলীগের উন্নয়ন দেখা যায় না। বিএনপিকে বলবো আপনারা চোখে পাওয়ার চশমা লাগান। তা না হলে আমাদের উন্নয়ন দেখবেন না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতুর ৬০ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। ৩১ হাজার কোটি টাকা নিজস্ব ব্যয়ে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেখিয়ে দিয়েছেন বাঙালী জাতি বীরের জাতি। চোরের জাতি না। দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর প্রক্রিয়া কাজ শুরু হয়ে গেছে। সেটা এখন নীরবে এগিয়ে যাচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতুও শেখ হাসিনার হাত ধরে হবে। আমরা যে কথা বলবো। সেটা করবো। অযথা মানুষের মধ্যে মিথ্যা আশ^াস দিবেন না। নেতা হতে হলে জনতার হৃদয়ে নাম লেখা হবে। হৃদয়ে নাম লিখিয়ে শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু হয়েছেন। হৃদয়ে নাম লিখিয়ে শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক হয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল দিয়েছেন শেখ হাসিনা। রাজবাড়ীতে ৯০ভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। নির্বাচনের আগে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে। এদেশের ইতিহাসে নারী জাতিকে প্রথম সম্মান দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা থেকে শুরু করে উপবৃত্তি দিচ্ছেন। তাই আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে।
কর্মী সভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কারিগরী ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি আলহাজ¦ কাজী কেরামত আলী, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার, বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ আকবর আলী মর্জি, মহম্মদ আলী চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। কর্মী সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম।
কর্মী সভায় বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দেশে সড়ক ও জনপথে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। যারা বাংলাদেশের চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে তাদের কে দাঁত ভাঙা জবাব দিতে হবে। আমাদের ঐক্যের কোন বিকল্প নেই। জয়লাভের কোন বিকল্প নেই। জনতার সাথে সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
কারিগরী ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ কাজী কেরামত আলী বলেন, বিএনপির সময় কোন রাস্তাঘাট উন্নয়ন হয়নি। তাদের উন্নয়ন ছিল জঙ্গীবাদে। তাদের উন্নয়ন সন্ত্রাসবাদে। আমরা মিথ্যাচার করি না। মিথ্যাচার করা উনাদের অভ্যাস। উনারা জাতীয় ঐক্য করেছেন। রাজবাড়ীতে এই জাতীয় ঐক্য ৫শত ভোটও পাবে না।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী-২আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে দেশ আজ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে। সামনে ডিসেম্বরে নির্বাচন। এই নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে। সকল ষড়যন্ত্র নষ্ট করে দিয়ে আবারো নৌকায় ভোট দিতে হবে।