Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

তদন্ত করছে সিআইডি॥বালিয়াকান্দির নারুয়ার ইঞ্জিঃ আমির আলী হত্যা মামলার অগ্রগতি নেই!

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ দুই মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার আমির আলী মোল্লা(৬৫) হত্যা মামলার অগ্রগতি নেই।
ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের ভাই ফররুক আহম্মেদ ওরফে ফরমান আলী মোল্লার বালিয়াকান্দি থানায় দায়েরকৃত প্রথম মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ(সিআইডি) তদন্ত করছে। মামলাটির তদন্তকালে এ পর্যন্ত মোট ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে আকবর আলী মল্লিক(৫৪) নামের একজন হাইকোর্টের জামিনে এবং অন্য ২জন জেলহাজতে রয়েছে।
অপরদিকে ঘটনার দেড় মাস পর নিহতের স্ত্রী পারভীন আক্তার ওরফে ফাহিমা আমিরের রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে দায়েরকৃত দ্বিতীয় মামলাটির এখনো কোন আদেশ হয়নি। আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর মামলাটির আদেশের জন্য দিন ধার্য্য রয়েছে।
মামলা ও অন্যান্য সুত্রে প্রকাশ, নিহত আমির আলী মোল্লা একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার ও সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন। চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর মাদারীপুরে এলজিইডির একটি প্রজেক্টে কর্মরত ছিলেন এবং স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। গ্রামে জমি-জমা থাকায় সেগুলো দেখাশোনা করার জন্য মাঝে-মধ্যে গঙ্গারামপুর গ্রামের বাড়ীতে আসতেন। জমি-জমা নিয়ে তার সাথে দুঃসম্পর্কের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজনের বিরোধ ছিল। গত ৮ই জুলাই রাতে গ্রামের বাড়ীতে থাকাকালে তিনি খুন হন। পরদিন ৯ই সেপ্টেম্বর সকালে পার্শ্ববর্তী মাঠের মধ্যে জনৈক আকমল মন্ডলের পাটক্ষেতে তার লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে এবং নিহতের ভাই ফররুক আহম্মেদ ওরফে ফরমান আলী মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে বালিয়াকান্দি থানায় মামলা নং-৮, তাং-১০/৭/২০১৮ ইং, ধারা ঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
মামলার দিনই পুলিশ নিহতের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় একই গ্রামের মৃত সুলতান মল্লিকের ছেলে আকবর আলীকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। পরে সে হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পায়। এছাড়াও পরে পুলিশ আরও ২জনকে গ্রেফতার করে, যারা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।
ইঞ্জিঃ আমির আলী খুন হওয়ার দেড় মাস পর ২৬শে আগস্ট নিহতের স্ত্রী পারভীন আক্তার ওরফে ফাহিমা আমির বাদী হয়ে রাজবাড়ীর ১নং আমলী আদালতে দন্ড বিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আরেকটি মামলা(মিস.পি-২২৫/১৮) দায়ের করেন।
মামলায় গ্রেফতারকৃত আকবর আলীসহ তার ভাই আক্কাস আলী(৪০), আকবর আলীর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম(৪২), ছেলে বায়েজিদ(২৮), একই গ্রামের গঙ্গারামপুর) মৃত অহেদ আলীর ছেলে সিরাজ(৫৫) এবং কাউসার আলী লস্করের ছেলে অহিদ লস্কর (২৮)সহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামী করা হয়।
এ মামলায় উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে নিহত ইঞ্জিঃ আমির আলীর সাথে আসামীদের জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সে কারণে আসামীরা আমির আলীকে গ্রামে না আসার জন্য হুমকি দিত। গত ৭ই জুলাই আমির আলী গ্রামের বাড়ীতে আসেন। ৮ই জুলাই রাতে আমির আলীর চাচাতো ভাই ইকামত মল্লিক তাকে ফোন দিয়ে জানায় আকবর আলীর দায়েরকৃত একটি মামলায় বাড়ীতে পুলিশে এসেছে। এর ৫/৭ মিনিট পর ইকামত আলী পুনরায় আমির আলীর মোবাইলে ফোন দিলে তা বন্ধ থাকে। তার কিছুক্ষণ পর ইকামত মল্লিকের ২ মেয়ে ঝুমুর ও নুপুর আমির আলীর বাড়ীতে গিয়ে ঘর তালাবদ্ধ দেখতে পায়। ফাহিমা আমিরের ধারণা জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আসামীরা পরিকল্পিতভাবে আমির আলীকে হত্যা করে লাশ পাটক্ষেতে ফেলে রেখেছিল। তিনি ঢাকায় থাকার কারণে পরবর্তীতে বাড়ীতে এসে স্বাক্ষীদের নিকট ঘটনা শুনে আদালতে মামলা দাখিল করে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নিকট এফআইআরের আদেশ কিংবা সিআইডি রাজবাড়ীকে দিয়ে তদন্তের আদেশ চাওয়া হয়। বিজ্ঞ আদালত আগামী ২৩শে সেপ্টেম্বর মামলার আদেশের জন্য দিন ধার্য্য রেখেছে।
নিহত ইঞ্জিঃ আমির আলীর স্ত্রী পারভীন আক্তার ওরফে ফাহিমা আমিরের পক্ষের আইনজীবী এডঃ এম.এ খালেক বলেন, সঠিকভাবে মামলাটির তদন্ত হচ্ছে না। পুলিশ প্রধান আসামী আকবর আলীকে গ্রেফতার করলেও সে বর্তমানে হাইকোর্টের জামিনে রয়েছে। অপর যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের একজন(বায়েজিদ) জামিনে থাকা আকবরের ছেলে এবং অপরজন ফরিদ নিহতের স্ত্রী’র করার মামলার স্বাক্ষী। লাশ উদ্ধারের সময় মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে সুস্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন থাকলেও পোস্টমর্টেম শেষে অহেতুক ভিসেরা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি সঠিকভাবে মামলাটির তদন্ত এবং অভিযুক্ত আসামীদের গ্রেফতারের দাবী জানান।