Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি প্রকল্পের আওতায় ‘নারী নির্যাতন ও যৌন হয়রানীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, প্রতিরোধ গড়ি, প্রতিহত করি’ শ্লোগানকে সামনে রেখে গতকাল ১১ই সেপ্টেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা সদর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক।
এছাড়াও অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনুর আক্তার বিউটি, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ আতাহার আলী, বানিবহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ গোলাম মোস্তফা বাচ্চু এবং এনজিও রাসের নির্বাহী পরিচালক লুৎফর রহমান লাবু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি মোঃ নেফাজ উদ্দিন এবং বিষয়ভিত্তিক পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি প্রকল্পের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান।
এ সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পারমিস সুলতানা, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা সেলিনা পারভীন, পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী আলমগীর, চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সিরাজুল আলম চৌধুরীসহ ব্র্যাকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক বলেন, আমরা যারা সমাজে বসবাস করি তাদের সকলেরই উচিত বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। আর যদি আমরা সকলে মিলে সম্মিলিতভাবে এই প্রচেষ্টা চালাই তবে আমি বিশ্বাস করি হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের সমাজকে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন চিরতরে দূর করা সম্ভব হবে। অতীতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে জন্মসনদ নিয়ে বাল্য বিবাহ দেয়া হতো। কিন্তু বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্মসনদ প্রদানের কারণে সেটি দূর করা সম্ভব হয়েছে। অনেক সময় মসজিদের কিছু কিছু ইমাম অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে গোপনে শরীয়ত অনুযায়ী কোন রকম রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই বাল্য বিবাহ পড়াচ্ছেন, যা মোটেও কাম্য নয়। বর্তমান সরকার বাল্য বিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছে। সেই লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলায় আলাদা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করাসহ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।
তিনি নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ বন্ধে সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহবান জানান। এছাড়াও তিনি বাল্য বিবাহের কারণে নারীদের যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয় ও দেশের অগ্রগতিতে তারা কোন ভূমিকা রাখতে পারে না সেসব বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের সমাজে বর্তমানে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশী নির্যাতিত হচ্ছে। পুরুষশাসিত এই সমাজে যখন নারীরা পুরুষের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তখনই হিংসার বশবর্তী হয়ে অনেক পুরুষই নারীদের উপর নির্যাতন করছে। আবার অনেক সময় অভিভাবকদের অসচেতনতা ও অজ্ঞতার কারণে তার কন্যা সন্তানটিকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ভালো ছেলে পেলে বাল্য বিবাহ দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সেই অভিভাবক নিজেও জানে না কন্যা সন্তানের ভালো করতে গিয়ে বাল্য বিবাহ প্রদানের মাধ্যমে সন্তানটিকে স্বাস্থ্যগত ও তার জীবনের আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বর্তমান সরকার নারী নির্যাতন ও বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বাল্য বিবাহ যেই প্রদান করুক বা যেসব অভিভাবক তার ছেলেমেয়েকে বাল্য বিবাহ দিচ্ছে বা যে ছেলে বাল্য বিবাহ করছে আইন অনুযায়ী বাল্য বিবাহের ৬ মাস থেকে ২ বছর পরও তাদেরকে শাস্তি দেয়ার বিধান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাল্য বিবাহের সাথে সম্পৃক্ত কারোরই আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ নাই। সকলকে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রতিটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২/৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হবে যাদেরকে পর্যায়ক্রমে একটি করে সাইকেল প্রদান করা হবে। যার মাধ্যমে তারা যখনই বাল্য বিবাহের খবর পাবে তখনই সেখানে গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাবে এবং প্রয়োজনের প্রশাসনের সহযোগিতায় তা বন্ধের ব্যবস্থা করবে।