Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাজবাড়ীতে নতুন সঞ্চালন লাইনসহ নির্মিত হচ্ছে গ্রীড উপকেন্দ্র —-শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সপ্তাহ-২০১৮ উপলক্ষে রাজবাড়ী ওজোপাডিকো ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আয়োজনে গতকাল ৬ই সেপ্টেম্বর র‌্যালী, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৯টায় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হবে।
র‌্যালীতে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী, পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ কামরুল ইসলাম গোলদারসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।
র‌্যালী শেষে সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বিটিভির সৌজন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ঢাকায় বিদ্যুৎ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
এরপর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী এবং রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী।
এ সময় পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মোঃ কামরুল ইসলাম গোলদার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তারিক কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ হেদায়েত আলী সোহরাবসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সেক্টরকে সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে দেশ বর্তমানে প্রায় ১৮হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আরও নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হওয়ায় ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। এর ফলে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব হবে। এই বিদ্যুতের সঠিক ব্যবহারের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে হবে। রাজবাড়ীতে বর্তমানে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক ভালো হয়েছে। সে কারণে এই গরমের মধ্যেও জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেকটাই স্বাভাবিক আছে। এই নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ফরিদপুর হতে রাজবাড়ী পর্যন্ত ৩৩ কেভির নতুন সঞ্চালন লাইনসহ একটি গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই গ্রীড উপকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। তখন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার আরো উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের সকলের চাওয়া। আর এই উন্নত বাংলাদেশকে গড়তে হলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং আগামী নির্বাচনে দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সকলকে আবার নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করতে আহবান জানান। এছাড়াও তিনি নির্বাচনের আগে রাজবাড়ী জেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানান।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, বাংলাদেশে গত ১০ বছরে সবচেয়ে বেশী উন্নয়ন হয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগে। যার কারণে আজকে দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। শুধু বিদ্যুৎ খাতই নয়, জ্বালানী সংশ্লিষ্ট সকল খাতেই যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে। সেই ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর খাতে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। দেশের গ্যাসের চাহিদা মিটাতে বিদেশ থেকে গ্যাস আমদানী করার জন্য এলজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে সরকার ২৪হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় পাবনার রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বাগেরহাটের রামপালসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে কয়লা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক মাল্টিপারপাস বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ীতে গত একবছর আগে বিদ্যুতের যে সমস্যা ছিল বর্তমানে তা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আগামী ৬ থেকে ৭ মাসের মধ্যে পাওয়ার গ্রীড সাবস্টেশন চালু হলে ফরিদপুরের উপর নির্ভরতা কমিয়ে জেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
আলোচনা সভার শেষে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।