॥রঘুনন্দন সিকদার॥ রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের আড়কান্দি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক পলাশ দে কর্তৃক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের স্বাক্ষর স্ক্যানের মাধ্যমে জাল করে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বসিয়ে চুক্তিপত্র তৈরী করে অগ্রণী ব্যাংকে দাখিলের ঘটনা টক অব দ্যা উপজেলায় পরিণত হয়েছে।
জানাগেছে, প্রধান শিক্ষক পলাশ দে কর্তৃক সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিমের সাথে তার দূরত্ব সৃষ্টি হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রধান শিক্ষক পলাশ দে গত ১৮ই জুলাই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতনের ৪০ লক্ষ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের চুক্তিপত্রে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিমকে না জানিয়ে তার স্বাক্ষর কম্পিউটার স্ক্যানের মাধ্যমে জাল করে চুক্তিপত্রটি সম্পাদন করে অগ্রণী ব্যাংকের নলিয়া জামালপুর শাখায় জমা দেন।
সভাপতির স্বাক্ষর নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সন্ধিহান হয়ে পরীক্ষা করলে তা স্ক্যানের মাধ্যমে জাল স্বাক্ষর হিসেবে প্রমাণিত হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বিদ্যালয়ের সভাপতি রেজাউল করিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করেন। পরে প্রধান শিক্ষক পলাশ দে ব্যাংক ম্যানেজারের নিকট বিষয়টির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে দাখিলকৃত চুক্তিপত্রটি ফেরত নিয়ে চলে আসে এবং বিভিন্ন মহলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে নানান অপকৌশল গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ওবাইদুর রহমান ও আদেল উদ্দিন সেখ বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়টি চলছে অনিয়মের মাধ্যমে। প্রধান শিক্ষক পলাশ দে কর্তৃক সভাপতির স্বাক্ষর স্ক্যানিং-এর মাধ্যমে জাল করার ঘটনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করছেন। এছাড়াও তিনি ভাউচারে অনিয়মের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অর্থ নয়ছয় করছেন। এভাবে চলতে থাকলে বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন ও শিক্ষার মান নষ্ট হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও বহরপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম বলেন, প্রধান শিক্ষক পলাশ দে আমার স্বাক্ষর না নিয়ে স্বাক্ষর স্ক্যানের মাধ্যমে বসিয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতনের ৪০ লক্ষ টাকার চুক্তিপত্রটি সম্পাদন করেছেন। এটি একটি জালিয়াতি। এ প্রেক্ষিতে গত ২৫শে জুলাই অনুষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মিটিং সভায় বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিসহ স্বাক্ষর স্ক্যানিংয়ের জালিয়াতির ঘটনায় প্রধান শিক্ষক পলাশ দে’র কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের নলিয়া জামালপুর শাখার ম্যানেজার মোঃ মেহেদী হাসান জানান, স্ক্যানিং-এর মাধ্যমে সভাপতির স্বাক্ষর বসিয়ে প্রধান শিক্ষক পলাশ দে কর্তৃক সম্পাদিত চুক্তিপত্রটি ব্যাংকে ধরা পড়ায় তা তার কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের কাজ ধৃষ্টতাপূর্ণ। এ ঘটনার পর গতকাল রবিবার পর্যন্ত বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকদের বেতন বিল দাখিল করা হয়নি।
এ ব্যাপারে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাসুম রেজা বলেন, ঘটনা সম্পর্কে অবগত হয়ে আমি বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গিয়েছিলাম এবং ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে কথা বলেছি। বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে যে সকল অসংগতি পাওয়া গেছে তা আমরা লিপিবদ্ধ করে প্রতিবেদন আকারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ দে’র বিরুদ্ধে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পত্র গত ২৮শে জুলাই পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক পলাশ দে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাৎসরিক বেতনের চুক্তিপত্রের স্ট্যাম্পে সভাপতি স্বাক্ষর কম্পিউটারের মাধ্যমে স্ক্যান করে বসানোর বিষয়টি অসত্য দাবী করেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পলাশ দে’র ডিজিটাল জালিয়াতি ধরা পড়লো ব্যাংকে!
