Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে দুই ছাত্রীর যৌন হয়রানীকারী লম্পট শিক্ষক হবি’র বিরুদ্ধে অবশেষে বিভাগীয় মামলা

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ দুই ছাত্রীর যৌন হয়রানীর ঘটনায় অভিযুক্ত রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের সূর্যনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লম্পট সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা ওরফে হবি’র বিরুদ্ধে অবশেষে বিভাগীয় মামলা দায়ের হয়েছে।
এ সংক্রান্তে রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমীন করিমী কর্তৃক গত ১৮ই জুলাই তাকে(মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা ওরফে হবিকে) পত্র দিয়ে (স্মারক নং-জেপ্রাশিঅ/রাজ/বীমা-২১/৯৭৪) উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আপনার বিরুদ্ধে সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-২০১৮ এর ২(খ) ও ২(খ) (অ) (আ) (ই) ও (ঈ) ধারায় বিভাগীয় মামলা রুজু করা হলো। একই বিধিমালার ৪(৩) (ঘ) মোতাবেক কেন আপনাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে না তার সন্তোষজনক জবাব ও আত্মপক্ষ সমর্থনে আপনার লিখিত বক্তব্য পত্র প্রাপ্তির পর ১০(দশ) কার্যদিবসের মধ্যে দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
এই বিভাগীয় মামলা দায়েরের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা কর্তৃক ২০১৬ সালের নভেম্বরে নিজ বিদ্যালয়ের(সূর্যনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়) ৪র্থ শ্রেণীর একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানী, বর্তমানে রাজবাড়ী পিটিআই’র পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে সংযুক্ত(ডেপুটেশনে) থাকা অবস্থায় প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলার সময় ৫ম শ্রেণীর একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রেরিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষার নির্ধারিত সময়সূচী(২৩ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল) পিছিয়ে ৯ই মে পর্যন্ত নেওয়ার জন্য তৎকালীন পিটিআই সুপারিনটেনডেন্টের নিকট দাবী জানানো ও সেই দাবী না মঞ্জুর করায় তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, সুপারিনটেনডেন্টের মৌখিক নির্দেশ অমান্য করে ২৬/০৭/২০১৭ খ্রিঃ তারিখে পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের সামনে সমাবেশের স্থানে বৃক্ষরোপণ, রোপনকৃত সেই বৃক্ষ যতœ সহকারে পরিকল্পিত স্থানে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বাঁধা দেয়া এবং জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থার নিকট পিটিআই প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, পিটিআই’র মালিকে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের বারান্দার বেডে রোপিত শোভাবর্ধনকারী গাছ উঠিয়ে ফেলে সেখানে পুঁইশাকের চারা রোপণ করা, বিধিসম্মত না হলেও একই আবেদনপত্রে সংযুক্তভাবে নৈমিত্তিক ছুটির আবেদন করা, পিটিআই’র সুপারিনটেনডেন্টের সম্মতি থাকা সত্ত্বেও পিটিআই কর্তৃপক্ষের মাধ্যম ব্যতিরেকে শিক্ষা সফরে যাওয়ার জন্য সরাসরি জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা, পিটিআই কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে এবং ক্লাস না নিয়ে প্রায়ই বিদ্যালয় ত্যাগ করা, এহেন কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা বিঘিœত করা, আচরণে অনৈতিকতা, প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, কর্তব্যে অবহেলা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি ঔদ্ধত্য প্রকাশিত হওয়ার অভিযোগসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ই জুন দৈনিক মাতৃকণ্ঠে “প্রাথমিক শিক্ষক নেতা হবি’র বিরুদ্ধে ফের ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে সর্বত্র তোলপাড় সৃস্টি হয়। তার শাস্তির দাবীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
এ ঘটনার পর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রহস্যজনক কারণে নীরব থাকায় জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অবশেষে নিজের অস্তিত্ব ঠিক রাখতে অবশেষে জেলা শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমীন করিমী সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা ওরফে হবি’র বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন।