Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হবার সম্ভাবনা

॥দেবাশীষ বিশ্বাস॥ নির্দিষ্ট সময়ে পাট চাষ শুরু করতে না পারা এবং বৃষ্টির কারণে এবার রাজবাড়ীতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বীজ বপনের পর অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে পাট চাষীরা। ফলে এ বছর পাট চাষে ফলন বিপর্যয়ের শংকা রয়েছে কৃষকদের মাঝে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এ বছর ৪৯ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তার বিপরীতে পাট চাষ হয়েছে ৪৭ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে।
রাজবাড়ীর সদর, বালিয়াকান্দি, পাংশা, গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলার কৃষকরা বিপুল পরিমাণে পাট চাষ করে থাকে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এ বছর তারা সময়মতো পাট চাষ শুরু করতে পারেনি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে রয়েছে ফলন বিপর্যয়ের পাশাপাশি দাম নিয়েও তাদের রয়েছে শংকা। কৃষি বিভাগ বিষয়টি স্বীকার করলেও কৃষকদের অভিযোগ, বিপর্যয়ের এ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া যায়নি কোন পরামর্শ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানাযায়, এ বছর রাজবাড়ী সদর উপজেলার ১১ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এর বিপরীতে ১০ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে, বালিয়াকান্দি উপজেলাতে ১২ হাজার ২০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এবং গোয়ালন্দ উপজেলাতে ৪হাজার ৪০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৩ হাজার ৭৫০ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। তবে পাংশা ও কালুখালী উপজেলাতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাংশা উপজেলাতে ১২ হাজার ৭৫০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৩ হাজার ৩৫ হেক্টর এবং কালুখালী উপজেলাতে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে পাটের উৎপাদন হয়েছে।
সদর উপজেলার উদয়পুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, এ বছরের শুরুতেই অতিবৃষ্টির কারণে পাটের আবাদ কম হয়েছে। চৈত্র মাসের মাঝ থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে অনেক জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে কৃষকরা আর নতুন করে পাট বপন করেনি। বছর জুড়েই বৃষ্টির কারণে পাট বাছাই করা সম্ভব হয়নি, যে কারণে ফলনেও বিপর্যয় ঘটেছে। এ বছর ২২ শতাংশের এক পাখি জমিতে ৪ থেকে ৫ মণ ফলন পাওয়া যাবে, গতবার যেখানে ছিল ৭ থেকে ৮ মণ।
বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর এলাকার পাট চাষী ভবতোষ সরকার বলেন, এ বছর পাটের ফলন বিপর্যয় হবে। অনেক কৃষকই এবার ঘরে পাট তুলতে পারবে না। শেষ মুহূর্তের ঝড়ে পাট পড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। পেঁয়াজের পর এ বছর পাট চাষেও ক্ষতির মুখে পড়বে বালিয়াকান্দি অঞ্চলের কৃষকরা।
বিষয়টি স্বীকার করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ বছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। বছরের শুরুর থেকে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের উৎপাদন ভালো না হওয়ার পাশাপাশি ফলন বিপর্যয়ের শংকা রয়েছে। নীচু অঞ্চলের অনেক জমির পাট অতিবৃষ্টির কারণে তলিয়ে যাবার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হলেও প্রকৃতির উপর কারো হাত না থাকার কারণে এ বছর রাজবাড়ীতে পাটের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় নাই। কৃষি বিভাগের হিসাবে এ বছর রাজবাড়ীতে ১হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ কম হয়েছে।