Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

মাদক বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসে রাজবাড়ীতে র‌্যালী ও পথসভা

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে “শিশু ও যুবাদের প্রতি মনোযোগ দেয়াই তাদের নিরাপদ বেড়ে উঠার প্রথম পদক্ষেপ” শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে গতকাল ২৬শে জুন সকালে বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র‌্যালী কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বর থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়।
র‌্যালী শেষে সকাল সাড়ে ১০টায় কালেক্টরেটের আম্রকানন চত্বরে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি,বিপিএম-সেবা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফকীর আব্দুল জব্বার, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, রাজবাড়ী পৌরসভার মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ছাদেকুর রহমান। আর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাজিব মিনা।
এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজ্জামান খান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(পাংশা সার্কেল) মোঃ ফজলুল করিম, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) সানজিদা শাহনাজ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ তারিক কামাল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, জেলা জাসদের(ইনু) সাধারণ সম্পাদক মুনিরুল হকসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগণ, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালকগণ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণকে মাদকের বিরুদ্ধে একবাক্যে না বলতে হবে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের দৃষ্টিতে খারাপ যা কিছু ঘটছে তার সবকিছুর মূলে রয়েছে মাদক। আর এই মাদকের আসামীদের কারণে এখন কারাগারগুলোতে বন্দীদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। জেলায় মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশ, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সীমিত জনবল নিয়েও মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের ধরতে নিরলসভাবে কাজ করছে। মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার প্রথম দিকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন(র‌্যাব) মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের ধরতে জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা না করলেও বর্তমানে তারা মাদকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযান পরিচালনা করছে। আমি আশা করবো, রাজবাড়ী জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণে ভবিষ্যতে র‌্যাব আরও জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের সংখ্যা এমন হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল যে কোন অবস্থাতেই সরকারের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছিল না। যার কারণে সরকার বাধ্য হয়ে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষায় মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে হার্ডলাইনে যেতে বাধ্য হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনসহ জেলায় মাদক নিয়ন্ত্রণের সাথে নিয়োজিত সকলে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। যাতে কোন অবস্থাতেই কোন মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী ছাড় না পায়। জেলা প্রশাসনের সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কোন মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী মাদক নিয়ে ধরা পড়লে তাকে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কমপক্ষে ৩মাসের কারাদন্ড দিয়ে জেলে প্রেরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে মাদকসেবী বা ব্যবসায়ী যেই হোক কোন রকমের সুপারিশে তাকে ছাড়া হবে না। সর্বোপরি মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টরা কেউ ছাড় পাবে না। আর এই ক্ষেত্রে তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলকে জেলা থেকে মাদক নির্মূলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা কামনা করেন।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থেকে লেখাপড়া ও খেলাধুলার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা বলেন, মাদক এমন একটি নেশা জাতীয় দ্রব্য যা দেশ, জাতি, সমাজ, পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসা মরণনেশা ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। বর্তমানে মাদকদ্রব্য সারাদেশে এমন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, সরকার এই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যার অংশ হিসেবে জেলা পুলিশ মাদক নির্মূলে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের ধরতে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে। মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী যেই হোক জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে কোন প্রকার বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না এবং যে মাদকসেবী বা মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রদান করবে তার পরিচয় গোপন রাখা হবে। তবে তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে, কাউকে কোন প্রকার হয়রানী করার জন্য তথ্য প্রদান করা যাবে না। মাদক ব্যবসায়ী বা মাদকসেবী যেই হোক যদি সে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সেক্ষেত্রে কোনরকম সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না।
তিনি জেলার সকলকে মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে জেলা পুলিশকে তথ্য প্রদানের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষার্থীদের মাদক থেকে দূরে থেকে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পথসভা শেষে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।