Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধের স্থায়ী সংরক্ষণে নৌ বাহিনীর সাথে চুক্তি সম্পন্ন॥ঈদের পরে কাজ শুরু হচ্ছে — প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১০ই জুন সকাল ১০টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খানের সভাপতিত্বে সভায় কমিটির উপদেষ্টা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ) ও রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরন নাহার চৌধুরী লাভলী, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিম বক্স, পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডঃ এম.এ খালেক, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবু নাসার উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব, নারী নেত্রী এডঃ দেবাহুতি চক্রবর্তী ও অতিরিক্ত পিপি এডঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ ও কমিটির সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় কমিটির উপদেষ্টা শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি তার বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের ব্যাপারে সকলকে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। যার ধারাবাহিকতায় দেশব্যাপী মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। আমি আশা করবো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী রাজবাড়ী জেলার আনাচে-কানাচেতে যারা মাদক ব্যবসা ও সেবনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্নভাবে জানাযায়, রাজবাড়ী শহরসহ জেলার কোন কোন এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা এখনো গোপনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। আমি এ ব্যাপারে গত সভায় বলেছিলাম অন্তত একটি ইউনিয়নকে নির্বাচন করে সেখানকার মাদক ব্যবসা পুরোপুরি নির্মূল করার জন্য। কিন্তু সে বিষয়ে কোন জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। জেলা থেকে মাদক চিরতরে নির্মূলের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সকলের সহযোগিতা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অনেকের দাবীর প্রেক্ষিতে গত সভায় যাত্রীদের সুবিধার জন্য দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত যাতে রাত ১২টা পর্যন্ত যাতে বাস চলে সে ব্যাপারে জেলা বাস মালিক গ্রুপকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা আজকের সভায় বাস মালিক গ্রুপের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকায় জানা সম্ভব হচ্ছে না। যেহেতু তাদের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত নাই তারপরও আজকের সভা থেকে আমি তাদেরকে অনুরোধ করবো আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে তারা যেন কিছুদিনের জন্য হলেও সারা রাত দৌলতদিয়া থেকে জেলার বিভিন্ন গন্তব্যে ঈদে ঘরে ফেরা যাত্রীদের সুবিধার্থে বাস সার্ভিস চালু রাখে।
তিনি বলেন, ঈদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার খ্যাত দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ অনেক চাপ বেশী থাকে, সেই জন্য অনেকের দাবীর প্রেক্ষিতে দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক পরিহার করে ভিতরের রাস্তা দিয়ে সাময়িকভাবে লেগুনা চলাচলের অনুমতি দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। ঈদের পরে বাস মালিক গ্রুপসহ বিভিন্ন যানবাহনের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে যাতে দৌলতদিয়া থেকে রাজবাড়ী পর্যন্ত লেগুনা চলতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী বলেন, গত সভায় ধারওয়াপাড়া ঘাটসহ বিভিন্ন বালুমহাল থেকে বালুবহনকারী ট্রাক থেকে প্রকাশ্যে টোলঘর বসিয়ে চাঁদা আদায় বন্ধের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা হয়েছিল। এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী টোল ঘর ভেঙ্গে দিয়ে চাঁদা আদায় বন্ধ করলেও বিভিন্ন তথ্য মতে জানাযায়, বর্তমানে নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন ও ট্রাকে লোড দেয়ার সময় চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। ঈদের পরে একটি কমিটি করে এই চাঁদা আদায় বন্ধের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি, প্রয়োজনে আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাব। শুধুমাত্র শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন যানবাহন থেকে যে অর্থ নেয়াসহ সেই অর্থ ছাড়া মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে কোন ধরণের চাঁদা আদায় করা যাবে না।
রাজবাড়ীতে বর্তমানে বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে প্রচন্ড গরমে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ থাকে না। এছাড়াও তারাবীহ নামাজ ও সেহরীর সময়ও বর্তমানে বিদ্যুতের লোডশেডিং করা হচ্ছে। গত রাতেও হাল্কা বৃষ্টিতেই রাত ১টা থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা রাজবাড়ীর কোথাও বিদ্যুৎ ছিল না। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর বক্তব্য মতে, রাজবাড়ী জেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য লাইন সংস্কার, সাব-স্টেশন নির্মাণ, নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যায়। যেহেতু এই কাজগুলো করতে সময়ের প্রয়োজন সেহেতু কিছু দিন এই সমস্যা বিদ্যমান থাকবে। এরপরও আমি বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ করবো, রমজানের বাকি দিনগুলো, ঈদের সময় ও ফুটবল বিশ্বকাপের সময় রাজবাড়ী জেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক রাখা যায় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী আরো বলেন, রাজবাড়ী জেলাবাসীর জন্য আমি ২টি সুখবর দিচ্ছি। একটি হলো ঃ রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের জেলখানা থেকে পাংশায় রাজবাড়ী জেলার শেষ সীমানা পর্যন্ত ৩য় পর্যায়ের এগ্রিমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১২ই জুন তারিখ থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে। অপরটি হচ্ছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধ স্থায়ী সংরক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সাথে চুক্তিপত্র সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের পরে সেই কাজও শুরু হবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী থানার সাব-ইন্সপেক্টর বদিয়ার পূর্ব আক্রোশের জেরে একজন ফল ব্যবসায়ীকে ধরে পদ্মা পাড়ের চরে নিয়ে তার কাছে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়েছে বলে আমার কাছে অভিযোগ এসেছে। কীভাবে একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানো হলো সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রকৃত ঘটনাটি উদঘাটনের জন্য পুলিশ সুপারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এই এসআই বদিয়ারের নামে পূর্বেও এ ধরনের অনেক অভিযোগ ছিল বলে বিভিন্নজন আমাকে জানিয়েছে।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে দৌলতদিয়া ঘাটে আরো ২টি ফেরী ঘাট চালু করা, ঈদের সময় যাতে কমপক্ষে ২০টি ফেরী চালু থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, মাদকের গডফাদার থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যন্ত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও জেলাবাসীকে মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তথ্য প্রদান, সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজী বন্ধ, ঈদের আগে মহাসড়কের দ্রত সংস্কার করাসহ আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও তিনি সভায় উপস্থিত সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
কমিটির উপদেষ্টা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী তার বক্তব্যে বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার নতুন বাজার, শ্রীপুর, আলাদিপুর মিলগেট, গোয়ালন্দ মোড় ও দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে বিভিন্ন নামে-বেনামে অবৈধভাবে ছোট-বড় সব ধরনের যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গত মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটি বন্ধ হয়নি।
আমি আশা করবো মহাসড়কের সকল জায়গা থেকে এই চাঁদা আদায় বন্ধ করা হবে। রাজবাড়ী জেলার পদ্মার তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় বালু উত্তোলন করে পাহাড়ের মতো স্তুপ বানানো হয়েছে। যার জন্য শহর রক্ষা বাঁধসহ নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা হুমকির সম্মুখীন। এই হুমকি মোকাবেলায় বালু পাহাড় সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাজবাড়ী জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে বর্তমানে চরম দুরবস্থা বিরাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণ সাপ্লাইয়ের টেন্ডারে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে একই লোককে বারবার কাজ দেয়া হচ্ছে। অন্য কেউ এই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে গেলে টেন্ডারের সিডিউল ছিনতাইসহ বিভিন্নভাবে তাদেরকে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে অন্যরা যাতে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য আমি টেন্ডার বাক্স সিভিল সার্জনের অফিসের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রাখার জন্য সিভিল সার্জনকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে শুধুমাত্র সিভিল সার্জন অফিসেই টেন্ডার বাক্স রাখা হয়। অন্য কেউ টেন্ডার দিতে গেলে তাকে বাধা প্রদানসহ টেন্ডার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হচ্ছে না, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যারা এই ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত তাদেরকে তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি।
এছাড়াও তিনি তার বক্তব্যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন, মাদক সংশ্লিষ্ট সকলকে আইনের আওতায় আনা, এস.আই বদিয়ারের বিষয়টির তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ, দৌলতদিয়া ঘাটে পুলিশী তদারকি বৃদ্ধি ও যানজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়াও সভায় কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ তাদের বক্তব্যে আসন্ন ঈদের নামাজে যাতে কোন ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সেই লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি ঈদের নামাজের নিরাপত্তা রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শুক্রবারের জুম্মার নামাজে মসজিদগুলোতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মাধ্যমে ইমামদের জঙ্গীবাদ ও মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানো, মাদক বিরোধী অভিযান আরও জোরদার করা, বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান, ইজিবাইকের বর্ধিত ভাড়া কমানোসহ আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।