Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

ফেসবুকে ঝড়॥বয়স লুকিয়ে রাজবাড়ী জেলা ছাত্রদলের পদ পাওয়ার জন্য লবিং চালাচ্ছে ঝন্টু!

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আমিনুর রহমান ঝন্টু বয়স লুকিয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ পাবার জন্য জোড় লবিং চালানোর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যাম ফেসবুকে সমালোচনার ঝর বইছে।
অনুসন্ধান করে জানাগেছে, সর্বশেষ ২০০৪ সালে রাজবাড়ী জেলা ছাত্রদলের ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। ওই কমিটিতে মোস্তাফিজুর রহমান লিখনকে সভাপতি ও খায়রুল আনাম বকুলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই কমিটিতে আমিনুর রহমান ঝন্টুর নাম না থাকলেও কমিটি অনুমোদনের চার মাস পর তিনি বিশেষ লবিংয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদকের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি চিঠি আনেন। ওই চিঠিতে তাকে জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি বানানো হয়েছে বলে তিনি বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিতে থাকেন।
দীর্ঘ ১৪বছর পর বিভিন্ন জেলার মতো রাজবাড়ী জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। সংগঠনের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ২০০০ সালের পূর্বে এসএসসি পাশ করা কোন ব্যক্তি ছাত্রদলের নতুন কমিটিতে স্থান পাবেনা। যার কারণে ত্যাগী অনেক নেতা ইচ্ছা থাকলেও পদে আসতে পারবে না। কিন্তু আমিনুর রহমান ঝন্টু ১৯৯৬ সালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সূর্যনগর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করার পরেও বয়স লুকিয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ পাবার জন্য কেন্দ্রে জোড় লবিং চালাচ্ছেন। এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন ছাত্রদলের পদ পাবার জন্য যোগ্য নেতাকর্মীরা।
জেলা ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী এক নেতা বলেন, আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি আমিনুর রহমান ঝন্টু জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ প্রত্যাশা করে সেখানে তার কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে ২০০৪ সালে এসএসসি পাশ করা সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। জেনারেল বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করা একজন শিক্ষার্থীও চাইলে কারিগরি বিভাগ থেকে পরবর্তীতে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। তার মানে এই না যে তিনি সেই সার্টিফিকেট ব্যাবহার করে বয়স কমিয়ে পদের লোভে প্রতারণা করবেন।
তিনি আরও বলেন, শুনেছি আমিনুর রহমান ঝন্টু নাকি তার জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্টেও জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের বয়স কমিয়েছেন। বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি কার্ড ও পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে বয়স কমানোর ঘটনা অহরহ ঘটছে। আমরা জেলা ছাত্রদলের পদ প্রত্যাশী ও ছাত্রদলকর্মীরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে, সজীব রাজা নামে এক ছাত্রদল নেতা আমিনুর রহমান ঝন্টুর ছবি ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা সূর্যনগর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে তার এসএসসি পাশের প্রশংসা পত্রের ছবি পোস্ট করে ফেসবুকে লিখেছেন, ছাত্রদলের নিয়ম অনুযায়ী ২০০০ সালের আগে কেউ এসএসসি পাশ করলে সে ছাত্রদলের কোন প্রার্থী হতে পারবে না। কিন্তু আমিনুর রহমান ঝন্টু ১৯৯৬ সালে পাস করে। কিভাবে কোন নিয়ম অনুযায়ী সে ছাত্রদল করতে চায়।
নোটন রাজবাড়ী নামে একটি ফেসবুক আইডিতে লিখা হয়েছে, ছাত্রদলের নিয়মানুযায়ী ২০০০ সালের আগে কেউ এসএসসি পাশ করলে সে ছাত্রদলের কোন প্রার্থী হতে পারবে না। আমিনুর রহমান ঝন্টু আপনি ১৯৯৬ সালে পাশ করেছেন। যাইহোক, ছাত্রদলে আপনার আগ্রহ প্রকাশে আমরা আনন্দিত। কিন্তু সংগঠনের নিয়মের বিপরীতে অবস্থান কোনভাবেই কাম্য নয়। দলের এই করুন মুহুর্ত ত্যাগের পরিচয় দিতে হবে। অন্য কোন দল বা সংগঠন যেন আপনাদের দল বা সংগঠনের দিকে তাকিয়ে না হাসে।
আমিনুর রহমান ঝন্টুর বয়স লুকিয়ে পদ প্রত্যাশার বিষয়ে নিন্দা জানিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদল সমর্থিত অনেকেই ফেসবুকে এমন পোস্ট দিয়েছেন।
সূর্যনগর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস ছালাম বিশ্বাস বলেন. কালিনগর গ্রামের আব্দুল মাজেদ মোল্লার ছেলে আমিনুর রহমান ঝন্টু ১৯৯৬ সালে আমাদের বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়। এসএসসি পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ছিলো- ১৪৫০৪৯ ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিলো- ০৯৮১৫৩/৯৪ ইং। এসএসসি পরীক্ষার সনদে তার জন্ম তারিখ- ০৫/১০/১৯৮০ইং।
এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল ১০ই জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমিনুর রহমান ঝন্টুর ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।