॥পাংশা প্রতিনিধি॥ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের(স্বাচিপ) সভাপতি ডাঃ ইকবাল আর্সলানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত কয়েকদিন ধরে সরগরম হওয়ার বিষয়ে গত ২৬শে মে স্থানীয় দৈনিক মাতৃকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলাসহ জেলার সর্বত্র জনসাধারণে মাঝে বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
প্রয়াত জামায়াত এমপি’র পুত্র এবং জামায়াত-বিএনপি ঘরানার লোক হওয়ায় ইতিমধ্যে ইমেজ সংকটে পড়েছেন স্বাচিপ নেতা ডাঃ ইকবাল আর্সলান। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন তার পিতা প্রয়াত সংসদ সদস্য ডাঃ একেএম আসজাদ ও তার পরিবারের লোকজনের। জনশ্রুতি রয়েছে ডাঃ একেএম আসজাদের ভাই আবুল কালাম আজাদ ওরফে অনিল মিয়ার পিস কমিটির সাথে সম্পৃক্ততা, তার অপর ভাই কাজী আবুল কালাম আজমল ওরফে কায়সার মিয়ার মুক্তিযুদ্ধের সময় ডাকবাংলো থেকে জাতীয় পতাকা নামানোসহ মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা এবং আওয়ামী লীগের কান্ডারী জাতীয় সংসদ সদস্য মোঃ জিল্লুল হাকিমের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা ও হত্যার ষড়যন্ত্রের মুখোশ ধীরে ধীরে উন্মোচন হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা জরালো হচ্ছে।
স্বাচিপ সভাপতি ডাঃ ইকবাল আর্সলানের পৈত্রিক বাড়ী পাংশা পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে মাগুরাডাঙ্গী গ্রামে। এলাকায় না এসে ঢাকায় বসে সমর্থকদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছেন স্বাচিপের শীর্ষ এই নেতা।
বিশেষ করে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বাচিপ নেতা ডাঃ ইকবাল আর্সলানের পোস্টার, লিফলেট, ফেসবুক প্রচারণার কারণে তার পরিবারের লোকজনের মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী বিরোধী কর্মকান্ডের নানা তথ্য উপাত্ত জনসাধারণের সামনে তুলে ধরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যে ডাঃ ইকবাল আর্সলানের পিতা-চাচা, ভাই ও আপন চাচাতো ভাইদের আওয়ামী বিরোধী কর্মকান্ডের নানা তথ্য উপাত্য জনসাধারণের মাঝে তুলে ধরতে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তারা বলছেন, ডাঃ ইকবাল আর্সলানের পিতা ডাঃ একেএম আসজাদ ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ীপাল্লা প্রতীক নিয়ে রাজবাড়ী-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের সময় মাগুড়াডাঙ্গী কাজী আব্দুল মাজেদ একাডেমী মাঠে এক ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর আওয়ামী লীগ বিরোধী প্রচারণাই ছিল জামায়াত নেতা ডাঃ একেএম আসজাদের বিজয়ের মূলমন্ত্র।
পরবর্তীতে জনপ্রিয়তার ধ্বসের কারণে ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিমের কাছে কাছে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডাঃ একেএম আসজাদ পরাজিত হয়ে জামানত হারান। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলহাজ্ব এবিএম নূরুল ইসলাম দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে পাংশা উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৯জন কর্মীকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। হাতুড়ী পেটা, রাস্তার গাছ কাটা, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ সন্ত্রাস-চাঁদাবাজীতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। তখন ডাঃ ইকবাল আর্সলানকে নির্যাতিত মানুষের পাশে দেখা যায়নি।
সুত্র জানায়, ডাঃ ইকবাল আর্সলানের আপন বড় ভাই পেশওয়ার আর্সলান মনরো জামায়াতের রোকন, তার আপন মেজো চাচা আবুল কালাম আজাদ (অনিল মিয়া) ছিলেন পিস কমিটির সদস্য। ডাঃ ইকবাল আর্সলানের অপর চাচা কায়সার মিয়ার ছোট ছেলে কাজী ফরহাৎ জামিল(রুপু কাজী) পাংশা পৌরসভা জামায়াতের আমীর।
বিগত পাংশা পৌরসভা নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে কাজী ফরহাৎ জামিল(রুপু কাজী) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এছাড়া ডাঃ ইকবাল আসর্লানের অন্য চাচার অপরাপর ছেলেরা বিএনপি-জামায়াত ঘরানার লোক হিসেবে পরিচিত।
অভিযোগ রয়েছে, রাজবাড়ী-২ আসনের বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জিল্লুল হাকিম ১৯৯৫ সালে যখন তৃণমূলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মাঠে নামেন তখন কায়সার মিয়া গংরা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিমের উপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এমপি জিল্লুল হাকিমের রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় পাংশা, কালুখালী, বালিয়াকান্দি তথা রাজবাড়ী জেলায় তিনি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় ও প্রাণপুরুষ হিসেবে পরিচিতি লাভ পেয়েছেন।
মোঃ জিল্লুল হাকিম তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করায় তিনি এলাকার উন্নয়নের রূপকার হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছেন।
এদিকে নানা কারণে আওয়ামী লীগের পদবঞ্চিত বিতর্কিত কতিপয় ব্যক্তি এবং বিএনপি-জামায়াতের কিছু লোক ডাঃ ইকবাল আর্সলানের পাশে থেকে তাকে তাকে নেতা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করলেও জামায়াত ঘরানার ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি ছড়িয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগেই তিনি ইমেজ সংকটে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তার বিরুদ্ধে রীতিমত প্রচারণার ঝড় চলছে।
### ইতিপূর্বে গত ২৬শে মে দৈনিক মাতৃকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত নিউজ দেখতে নিজের লাল ব্লককৃত লিঙ্কে ক্লিক করুণ।