Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

কালুখালীতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস না থাকায় জমি বেচা-কেনায় চরম দুর্ভোগ॥কর্তৃপক্ষ উদাসীন

দীর্ঘ ৮বছর যাবৎ নতুন উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন
॥স্টাফ রিপোর্টার॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে প্রায় ৮বছর যাবৎ। অথচ দীর্ঘ এ সময়ে স্থাপন করা হয়নি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। জনগুরুত্বপূর্ণ এই অফিসটি স্থাপিত না হওয়ায় কালুখালী উপজেলাবাসীকে পাংশা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমি কেনাবেচার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হচ্ছে।
সেখানে সিন্ডিকেট করে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। এর ফলে জমির ক্রেতা-বিক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহানোর পাশাপাশি সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।
গত ২০শে মে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম।
উক্ত সভায় তিনি বলেন, কালুখালী উপজেলার যেসব জমি পাংশা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি হয় সেখানে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জমির মূল্যের শতকরা ৯ শতাংশ ফি নেয়ার বিধান থাকলেও নেয়া হচ্ছে শতকরা ১২/১৩ শতাংশ। তখন জেলা প্রশাসক কোন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পাংশা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস এই অতিরিক্ত অর্থ নিচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য এবং ভবিষ্যতে যাতে এই অতিরিক্ত অর্থ আর নেয়া না হয় সে জন্য জেলা রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
কালুখালী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম শুরু হলেই কেবল উপজেলাবাসী জমি কেনাবেচার এই দুর্ভোগ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারে।
উল্লেখ্য, নিকারের ৯৪তম বৈঠকের সিদ্ধান্তে কালুখালী উপজেলা গঠিত হয়। ২০০৯ সালের ১৬ই নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারী হয়। পাংশা উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন (রতনদিয়া, কালিকাপুর, বোয়ালিয়া, মাজবাড়ী, মদাপুর, মৃগী ও সাওরাইল) নিয়ে কালুখালী উপজেলা গঠিত হয়। ২০১০ সালের জুন মাস থেকে প্রাথমিকভাবে রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এবং ২০১৪ সাল থেকে নবনির্মিত উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনে উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়।
কালুখালী উপজেলার আয়তন ১৬৯.৫৮ বর্গকিলোমিটার। মোট গ্রাম রয়েছে ১৬৬টি। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী মোট জনসংখ্যা ১লক্ষ ৫৫হাজার ৪৪জন। যার মধ্যে ৭৭ হাজার ৮৩৯ জন নারী ও ৭৭ হাজার ২০৫ জন পুরুষ।
২০১৫ সালের হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ১লক্ষ ১১হাজার ২৬৪জন, যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৬ হাজার ৪০৭ জন ও নারী ভোটার ৫৪ হাজার ৮৫৭জন।
এ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৪টি নদী (পদ্মা, গড়াই, চন্দনা ও হড়াই)। মোট আবাদী জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর। কৃষি পরিবারের সংখ্যা ৩২ হাজার ৬৩২টি। খাস জমির পরিমাণ কৃষি ১৮০৬.১৫ একর ও অকৃষি ২১১.৬৯ একর। হাট-বাজারের সংখ্যা ১৪টি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কলেজ রয়েছে ৩টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৬টি, এনজিও বিদ্যালয় ৫২টি, আন রেজিঃ বেসরঃ প্রাঃ বিদ্যালয় ১টি ও মাদ্রাসা রয়েছে ১১টি (দাখিল ৮টি, আলিম ২টি ও কামিল ১টি)। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মসজিদ ২৪০টি ও মন্দির ৫৪টি। অন্যান্যের মধ্যে থানা ১টি, পুলিশ ফাঁড়ি ১টি(মহেন্দ্রপুর), পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ১টি (মৃগী) ও পুলিশ ক্যাম্প ১টি (বি-কয়া), উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১টি (বোয়ালিয়া), ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩টি (মৃগী, খাগজানা ও রতনদিয়া), ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪টি (মাজবাড়ী, মদাপুর, সাওরাইল ও কালিকাপুর), কমিউনিটি ক্লিনিক ২২টি, ডাকঘর ১০টি, ব্যাংকের শাখা ৪টি (সোনালী, কৃষি, অগ্রণী ও ইউনিয়ন), গুচ্ছগ্রাম ১টি (সাওরাইল ইউনিয়নে), আশ্রয়ণ ১টি (বোয়ালিয়া ইউনিয়নে) ও সিনেমা হল রয়েছে ১টি।
এছাড়া রাজবাড়ী সদর, পাংশা ও কালুখালী উপজেলার ১৪১০.৮৭ একর নিয়ে প্রস্তাবিত রাজবাড়ী সেনানিবাসের ৯৩৭.৬৭ একর রয়েছে কালুখালী উপজেলার মধ্যে।
কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং রাজবাড়ী-২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্যের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।