Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ীতে র‌্যালী-আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষে “ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে টেলিকমিউনিকেশন্স সার্র্ভিসের ভূমিকা” শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১৭ই মে সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আম্রকানন চত্ত্বর থেকে শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে এসে শেষ হয়। এরপর বেলা ১১টায় কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা।
জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি। এ সময় পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রথমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাকিব খান ও পরে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) রেবেকা খান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাঈদুজামান খান, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমীন করিমী, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ মোক্তার আলী মল্লিক, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ ও বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী, এমপি তার বক্তব্যে বলেন, মহান স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছরই সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস পালিত হয়ে আসছে। পূর্বে এই দিবসটি পালন করার পরিসর ছোট হলেও বর্তমানে দেশের প্রতিটি জেলায় এই দিবসটি পালন করা হয়। আমি যখন প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম তখন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলাম। সেই সময় স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বিএনপি ক্ষমতায় থাকার কারণে এই কমিটির মিটিং তেমন হতো না। সেই সময়ের বিএনপি সরকার এই সেক্টর নিয়ে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেনি। এরপর ৯৬ সালে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর টেলিকমিউনিকেশন্সসহ যোগাযোগ সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে আবার ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তথ্য উপদেষ্টা ও সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। তার এই ডিজিটাল বাংলাদেশের গড়ার স্বপ্নে আমাদের স্বাধীনতা বিরোধীরাসহ অনেকে উপহাস করেছিল। কিন্তু আজ তিনি তার সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণনত করেছেন। শুধু সেখানেই শেষ নয়, আজ তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে পাঠানোর মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক হওয়ায় নিজ দেশের ডিজিটাল সেক্টরসহ টেলিকমিউনিক্যাশন্স সেক্টরে বিশ্বের বুকে অভূতপূর্ব সাফল্যের অধিকারী হয়েছে। সরকারের এই মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর সাফল্য অর্জন বর্তমানে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-বিএনপির কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার কারণে আজকে বিএনপির নেতারা বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন এই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরীতে ব্যাপক দুর্নীতি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপি জানে না যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে-বিদেশে একজন সৎ ও দেশপ্রেমী নেত্রী হিসেবে সর্বজনস্বীকৃত প্রধানমন্ত্রী। তার দেশপ্রেমের আর দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসার কারণেই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন আমাদের সকলকে বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি বিশ্বাস রেখে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
আলোচনা সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী তার বক্তব্যে বলেন, আজকে সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশে যে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস পালন করা হচ্ছে তার সদর দপ্তর কানাডার মন্ট্রিলে অবস্থিত। এই সংঘের মাধ্যমে বিশ্বের একটি দেশের সাথে অন্য দেশের সাথে টেলিযোগযোগ কিভাবে স্থাপন করবে সেসব বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়। পূর্বে আমরা টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি সাধন করতে পরিনি। বেশী দিন আগের কথা নয় যখন আমাদের দেশে এক শহর থেকে অন্য শহর ও বিশ্বের অন্য দেশের সাথে যোগাযোগ করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। সেই সময় টেলিযোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল টিএন্ডটি। কিন্তু বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার পর থেকে আমরা এই সেক্টরে অভূতপূর্ব সাফল্য অজন করেছি। যা বর্তমানে টেলিযোগযোগ ক্ষেত্রে আমরা উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের থেকে এগিয়ে। কারণ বর্তমানে আমাদের দেশের সকল মানুষই মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের যে কোন দেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। আর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে পাঠনোর মাধ্যমে এক্ষেত্রে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছি।
এছাড়াও তিনি দেশের বর্তমান টেলিকমিউনিকেশনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন।
আলোচনার শেষে দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা ও কুইজ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে প্রধান অতিথি শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব কাজী কেরামত আলী,এমপি পুরস্কার বিতরণ করেন। এরপর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীও সংগীত পরিবেশন করেন।