Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

বাঁধ রক্ষায় দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে বর্ষা মৌসুমে রাজবাড়ী শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশংকা॥নদী শাসনে কার্যকর উদ্যোগ নেই

॥আশিকুর রহমান॥ বর্ষা মৌসুম শুরুর আরো দেড় মাস বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর ভাঙন শুরু হয়ে গেছে। শহর রক্ষা বেড়িবাঁধটিও রয়েছে হুমকীর মুখে। এতে আতঙ্কে রয়েছেন পদ্মা নদীর তীরবর্তী শত শত পরিবার।
এরপরও নদী শাসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। স্থানীয়দের শঙ্কা, দ্রুত নদী শাসনে স্থায়ী পদক্ষেপ না নেয়া হলে আগামী বর্ষায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে শহর রক্ষা বাঁধটি। আর বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তলিয়ে যাবে রাজবাড়ী শহর।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা এলাকার কৃষক আকবর সরদার বলেন, গেল বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদীর গ্রাসে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি, চাষাবাদের জমি সবই হারিয়েছি। সব কিছু হারিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ কপালে নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ আশ্রয় নিয়েছি রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের এ পাড়ে অন্যের জমিতে। এ বছর নদী ভাঙে কী না সে চিন্তায় আছি। কারণ, বর্ষা প্রায় চলে এসেছে এবং নদী ভাঙতে ভাঙতে এসে ঠেকেছে শহর রক্ষা বাঁধের কাছাকাছি। কিন্তু বাঁধ রক্ষায় এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তিনি আরও বলেন, রাজবাড়ী সদর উপজেলার উড়াকান্দা, অন্তার মোড়, নয়নসুখ, চর বরাট, বেথুরী, সাজাপুর, বেতকা ও চর দেলুন্দিসহ কয়েকটি গ্রামে আমার মতো এমন শত শত পরিবার রয়েছে। পরিবারগুলো প্রতি মুহূর্তে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে। নদী শাসনে সরকার দ্রুত স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে পদ্মার তীরবর্তী এসব পরিবার শেষ আশ্রয়স্থল টুকুও হারাবে। এরই মধ্যে চর বরাট, বেথুরী, সাজাপুর, বেতকা ও চর দেলুন্দি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীতে বিলীন হতে শুরু করেছে ফসলী জমি।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, নদীতে তীব্র স্রোত শুরু না হলেও বর্ষা শুরুর আগেই ঝড়ো বাতাসে নদীতে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল ঢেউ। আর এ ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙতে শুরু করেছে পদ্মার পাড়।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সালাম বলেন, ২০১৭ সাল থেকে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ রক্ষার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সরকার আজ পর্যন্ত তা শুরু করতে পারেনি। গত বছর পদ্মার ভাঙনে শত শত ঘর-বাড়ী বিলীন হয়ে মানুষ মানবেতন জীবন-যাপন করলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধ হুমকীর মুখে। দ্রুত বাঁধ রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ না নিলে এ বছর বর্ষা মৌসুমে বাঁধ ভেঙে রাজবাড়ী শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, রাজবাড়ী শহর রক্ষা বেড়িবাঁধকে নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার জন্য পদ্মার তীরবর্তী যুবকেরা দীর্ঘদিন ধরে ‘বেড়ীবাঁধ রক্ষা আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি’ নামে একটি সংগঠন তৈরী করে ফেসবুকে তাদের দাবী জানিয়ে আসছে। এই সংগঠনের আয়োজনে গত ২রা মে বিকেলে রাজবাড়ী সদরের উড়াকান্দা বাজারে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকশ মানুষ সমবেত হন। কমিটির সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বিপ্লবের সভাপতিত্বে সভায় বাংলা ভিশন টিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি মিরাজ হোসেন গাজী, বরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সালাম, সাবেক চেয়ারম্যান কাজী সামসুদ্দিন, বরাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসজাদ হোসেন আরজু, শেখ আইয়ুব আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙনে শত শত পরিবার সব হারিয়ে পথে বসছে। কিন্তু নদী শাসনে দীর্ঘ মেয়াদী কোন পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। দ্রুত ভাঙন ঠেকাতে শহর রক্ষা বাঁধের স্থায়ী কার্যক্রম গ্রহণের দাবী তাদের। গত বছর ৩৪২ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের পরও এতদিনে কাজ শুরু না হওয়ায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী জানান, নদী ভাঙনের কবল থেকে রাজবাড়ী শহর রক্ষাকারী বেড়িবাঁধটি রক্ষার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ৩৪২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। নৌ বাহিনীর প্রতিষ্ঠান খুলনা শিপইয়ার্ড এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। শিগগিরই কাজ শুরুর আশ্বাস দিলেও দিনক্ষণ জানাযায়নি।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার জানান, প্রকল্প অনুমোদন হলেও বর্ষা চলে আসায় এ বছর শহর রক্ষা বাঁধ রক্ষায় স্থায়ী কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। প্রকল্পের আওতায় আপাতত জিও ব্যাগ দিয়ে শহর রক্ষা বাঁধ ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সে লক্ষ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সভা হওয়ার কথা রয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে প্রকল্পের মূল কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।