Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ীতে শোক॥না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি অনুবাদক মোস্তফা মীর

॥স্টাফ রিপোর্টার॥ চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কবি, ঔপন্যাসিক ও অনুবাদক মোস্তফা মীর।
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা মোস্তফা মীর গত ২রা মে দিনগত রাত ২টা ১০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন(ইন্নালিল্লাহি—–রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি রাজবাড়ীর বিশিষ্ট সাংবাদিক এম.দেলোয়ার হোসেনের আপন ভাগিনা।
মোস্তফা মীরের মামাতো ভাই সাংবাদিক শামীম খান জানান, তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে ছিলো। গত ৩০শে এপ্রিল গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করার সময় গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়েন মোস্তফা মীর। ওই দিন বিকেল থেকেই তাকে হাসপাতালটির নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে(আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে গত বুধবার দিবাগত রাতে চিকিৎসকরা তার লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শামীম খান জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মোস্তফা মীরের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার রায়ের বাজরের বাসভবনে। এর পর রায়ের বাজার প্রগতি সংঘ মসজিদে বাদ যোহর জানাজা শেষে রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
মোস্তফা মীর মূলত কবি। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে যারা প্রথম কবিতা লিখতে শুরু করেন এবং সত্তর দশকে বাংলা কবিতাকে যারা এদেশে জনপ্রিয় করে তোলেন মোস্তফা মীর তাদের অন্যতম।
তিনি ১৯৫৩ সালে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বড়লক্ষ্মীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি মাস্টার্স করেছেন ১৯৭৬ সালে। কর্মজীবনে একাধিকবার পেশা বদল করেছেন এবং একটি বেসরকারি সংস্থায় ১৮ বছর যুক্ত ছিলেন সম্পাদনাকর্মের সঙ্গে।
আজন্ম উদাসীন ও প্রচারবিমুখ এই কবির কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। পুরো আশির দশকে তিনি কোনো লেখালিখিই করেননি। নব্বই দশকের শুরুতে এসে হঠাৎ করেই লেখেন উপন্যাস ‘দানববংশ’। এ উপন্যাসের বিরুদ্ধে মৌলবাদীরা মামলা ঠুকলেও, তা ধোপে টেকেনি। তবে গদ্যচর্চার এই ধারাবাহিকতায় লেখেন আরও তিনটি উপন্যাস- ‘ঈশ্বরের ঘ্রাণ’, ‘কুকুরকুঞ্জ’ ও ‘তোমাকে চাই’।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময় থেকেই তিনি উপন্যাস রচনার পাশাপাশি অনুবাদকর্মে হাত দেন এবং গদ্য ও পদ্য মিলে তার অনুবাদ গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের অধিক। তিনি গত দেড় দশক ধরে যকৃতের অসুখে ভুগছেন। তার আলোচিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘মিশরীয় পুরাণ’ ও ‘আদম ইতিহাসের প্রথম চরিত্র’।
কবি, ঔপন্যাসিক ও অনুবাদক মোস্তফা মীরের মৃত্যুতে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক মাতৃকণ্ঠের সম্পাদক গভীর শোক প্রকাশ করাসহ শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।