Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেয়ার নামে ৭যুবকের ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র

॥শিহাবুর রহমান॥ রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলায় সেনাবাহিনীতে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ৭জন যুবকের কাছ থেকে ৫০লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় গত ২০শে মার্চ কালুখালী থানায় প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন একই উপজেলার হরিণবাড়ীয়া গ্রামের ছলোমান শেখ। অবশ্য তিনিই মিডিয়া হিসেবে এ চক্রের হাতে টাকা পয়সা তুলে দেন।
কালুখালী থানার মামলা নং-১৩, ধারাঃ ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬(২) পেনাল কোর্ড। আসামীরা হলো ঃ নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই গ্রামের মহর আলীর ছেলে মোস্তফা কামাল(৪০), তার স্ত্রী পপি কামাল(৩৬), আমির আলীর ছেলে রিপন ওরফে রানা(২৭), মহর আলীর ছেলে শাহ আলম(৩৫), মহর আলী(৬৫) ও তার স্ত্রী সালেহা বেগম। এদের মধ্যে মোস্তফা কামাল ও তার স্ত্রী টাঙ্গাইল জেলার সদরের কাকমারা এলাকায় বসবাস করেন।
প্রতারণার শিকার যুবকরা হলো ঃ পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের কামরুল হাসান(৩১), মাছপাড়া গ্রামের মজনু শেখ(১৮), মাসুদ রানা(১৮), কাচারীপাড়া গ্রামের পারভেজ(১৮), লক্ষীপুর গ্রামের হারুন(১৮), কালুখালী উপজেলার খাগজানা গ্রামের সাদ্দাম হোসেন(১৮) ও রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী গ্রামের নাজমুল হোসেন(১৮)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হরিণবাড়ীয়া গ্রামের ছলেমান শেখ ও মোস্তফা কামাল একে অপরের আত্মীয় ও পূর্ব পরিচিত। মোস্তফা কামাল সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন। ছলেমান শেখের বাড়ীতে বেড়াতে এসে তিনি জানান সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে তার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তিনি সেনাবাহিনীতে লোক ভর্তি করতে পারবেন। তাকে কয়েকজন লোক দিলে তিনি সবাইকে সেনাবাহিনীতে চাকুরী দিবেন। এজন্য প্রত্যেককে ১০লক্ষ করে টাকা দিতে হবে। তার কথায় ছলেমান শেখ উল্লেখিত ৭জন যুবককে সেনাবাহিনীর চাকুরীর জন্য নির্ধারন করেন। ছলেমানের সাথে মোস্তফা কামালের চুক্তি হয় ৭জনের চাকুরী দিতে ৭০ লক্ষ টাকা লাগবে। ৫০লক্ষ টাকা চাকুরীতে ভর্তির পূর্বেই দিতে হবে। আর বাকী ২০লক্ষ টাকা চাকুরীতে যোগদানের সময় দিতে হবে। চুক্তির কথা মতো বিগত ২০১৭ সালের ১লা এপ্রিল দুপুরে একটি মাইক্রোবাসে মোস্তফা কামালসহ উল্লেখিতরা ছলেমান শেখের বাড়ীতে টাকা নিতে আসেন। ছলেমান শেখ সবার সম্মুখে ৫০লক্ষ টাকা মোস্তফা কামালের হাতে তুলে দেন। এ সময় একটি ৩০০টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে অঙ্গীকার নামা করা হয়। টাকা পেয়ে মোস্তফা কামাল ৫০লক্ষ টাকার একটি চেক লিখে দেন। পরবর্তীতে মোস্তফা ওই ৭জন যুবককে একেক সময় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে নিয়োগপত্র প্রদান করেন। কিন্তু নিয়োগপত্র গুলো ছিল ভূয়া।
এদিকে দীর্ঘদিনেও চাকুরীতে যোগদানের কোন কাগজপত্র না আসায় মোস্তফা কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত ১০ই জানুয়ারী যোগদানের কাগজ পাওয়া যাবে বলে ওই যুবকদের আশ^স্ত করেন। কিন্তু ওই তারিখেও কাগজ না আসলে পুনরায় মোবাইলে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। কয়েকদিন তার সাথে যোগাযোগ ও কথাবার্তা হলেও এক পর্যায়ে সে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়। ফলে গত ২০শে জানুয়ারী ছলেমান শেখ ও ভুক্তভোগী যুবক কামরুল টাঙ্গাইলে মোস্তফা কামালের বাড়ীতে যান। সেখানে যাওয়ার পর তারা মোস্তফা কামালের কাছে চাকুরীর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে সে কোন সু-উত্তর দিতে পারেন না। তখন তার কাছে টাকা ফেরত চাওয়ায় সে তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ফলে তারা ভয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। এ ঘটনায় ছলেমান শেখ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, মোস্তফা কামাল সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন ঠিকই। তবে তিনি ছিলেন চাকুরীচ্যুত। কিন্তু এসব তথ্য আড়াল করে তিনি নিজেকে সেনাবাহিনীর মেজর বলে পরিচয় দিতেন। বলতেন সেনাবাহিনীর একজন রিক্রুট অফিসার তার বন্ধু। সে কারণে তিনি সেনাবাহিনীতে চাকুরী দিতে পারবেন। এজন্য তিনি বেছে নেন তার আত্মীয় ছলেমান শেখকে। ছলেমানের সাথে তার কথা হয় চাকুরীর টাকা থেকে মোটা অংকের টাকা তাকে কমিশন হিসেবে দেয়া হবে। আর সেই লোভেই ছলেমান ওই ৭জন যুবককে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ৫০লক্ষ টাকা নিয়ে মোস্তফা কামালকে দেন। বাকী ২০ লক্ষ টাকা থেকে ছলেমানের মোটা অংকের কমিশন দেয়ার কথা ছিল। কমিশনের টাকার কথা স্বীকারও করেন ছলেমানের ছেলে টুটুল। তবে তারা জানতেন না মোস্তফা কামাল চাকুরীচ্যুত।
তিনি আরো বলেন, মোস্তফা কামাল যদি টাকা ফেরত নাও দেন তাহলে তারাই ওই যুবকদের টাকা পরিশোধ করে দিবেন।