Site icon দৈনিক মাতৃকণ্ঠ

রাজবাড়ী জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত

॥আসহাবুল ইয়ামিন রয়েন॥ রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল ১১ই মার্চ সকাল ১০টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভা জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলীর সভাপতিত্বে কালেক্টরেটের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় কমিটির সদস্য পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি বিপিএম-সেবা, সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ রহিমা বক্স, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এডঃ এম.এ খালেক, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ, গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবিএম নুরুল ইসলাম, কালুখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই’র উপ-পরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান, গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসার উদ্দিন, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাসুম রেজা, জেল সুপার মোঃ আনোয়ারুল করিম, রাজবাড়ী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম মোঃ কামরুল ইসলাম গোলদার, জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রাজিব মিনা, জেলা জাসদের(ইনু) সভাপতি আহমেদ নিজাম মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেদায়েত আলী সোহ্রাব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারগণ, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এবং কমিটির অন্যান্য সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মোঃ শওকত আলী নবাগত পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলির সাথে উপস্থিত সকলের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, তার বোন আমাদের এডমিন ক্যাডারের সদস্য হওয়ায় তিনি আমার আমার পূর্ব পরিচিত। আমরা সকলে মিলে অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে রাজবাড়ী জেলার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় আরো বেশী পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করতে পারব। বর্তমানে জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বিক দিক বিচারে ভালো রয়েছে। তবে গত জানুয়ারী মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারী মাসে জেলায় খুন, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেশী ঘটার পাশাপাশি মাদক দ্রব্যের মধ্যে ফেনসিডিল বেশী ধরা পড়েছে। এই ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়া একদিক দিয়ে যেমন ভালো তেমনি অপরদিকে জেলার জন্য অশুভ সংকেত। কারণ আমাদের জেলায় কোন বর্ডার নেই। তারপরও এই ফেনসিডিল অন্য জেলা পার হয়ে আমাদের জেলায় প্রবেশ করেছে। এই মাদক উদ্ধারে জেলা পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও র‌্যাব খুব ভালো কাজ করছে। যার জন্য আমি জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির পক্ষ থেকে তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জেলায় ইভটিজিং ও খাদ্যে ভেজাল রোধে আগের তুলনায় অনেক বেশী মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। কিছুদিন আগে এসএসসি পরীক্ষা শেষে হয়েছে। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা না ঘটে সেই জন্য এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ৪ সেট প্রশ্ন প্রদান করা হবে। যার মধ্যে পরীক্ষার আধাঘন্টা আগে কোন সেটে পরীক্ষা হবে সেটা জানানো হবে। এতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা সম্ভব হবে। জেলার অনেক মাদক ব্যবসায়ী ছয় থেকে সাতবার ধরা পড়েও আইনের ফাঁক দিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এসে আবার মাদক ব্যবসা করছে। তারা যাতে সহজে জেল থেকে বের হয়ে আসতে না পারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই মাদকের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছেন জেলার অনেক কওমী মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। যাতে জেলার প্রতিটি কওমী মাদ্রাসায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। জেলায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ২২ মেগাওয়াট কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১৫ মেগাওয়াট। যার কারণে অনেক জায়গায় পিক আওয়ারেও লোডশেডিং হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি না থাকলেও কেন আমরা কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সমাধান করা হবে।
এ ছাড়াও তিনি দৌলতদিয়া ঘাট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়, গোদার বাজার ঘাট ও ধাওয়াপাড়া ঘাটের বালু উত্তোলন ও বাঁধের পাশেই বালু স্তুপ করে রাখা, রেলগেটের যানজট, লোকসেড বদ্ধভূমিতে যাওয়ার রাস্তা নির্মাণ, গোয়ালন্দের মদের দোকানে লাইসেন্সধারী ক্রেতাদের কাছে ছাড়া অন্যদের কাছে মদ বিক্রি সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ, পাংশা উপজেলায় বাইরের সন্ত্রাসীদের দ্বারা বিভিন্ন সময় অজ্ঞাত লাশ মাঠে ফেলে যাওয়া, চিকিৎসক ধর্ষণের ঘটনা, বড়পুল মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা, মেডিসিন দিয়ে কলা পাকানো, আগামী ১৭ই মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন ও ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করাসহ জেলা আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
কমিটির সদস্য নবাগত পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি তার বক্তব্যে বলেন, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতন একটি মারাত্মক অপরাধ। এই অপরাধের সাথে জড়িতদের কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। যে সকল ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের মামলা পুলিশের তদন্তাধীন রয়েছে সেগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ করা হবে। আমি আসার পর জেলার অনেকগুলো মাদকের স্পটের নাম পেয়েছি। আরো সংগ্রহ করছি। ইতিমধ্যে মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে জেলা পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে ও অনেক ইতিবাচক সফলতা এসেছে। জেলার যারা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা যত বড়ই হোক না কেন জেলা পুলিশ তাদেরকে একবিন্দুও ছাড় দেবে না। মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে জেলা প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা নিয়ে অপরাধ দমন করা হবে। দৌলতদিয়া ঘাট রাজবাড়ী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। যেখান দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ চলাচল করে। এই ঘাটে বিশৃঙ্খলা-চাঁদাবাজী রোধসহ পতিতাপল্লীতে নারী-শিশু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিশেষ নির্দেশ রয়েছে। সুতরাং যারা দৌলতদিয়া ঘাটসহ জেলায় অন্য জায়গায় বিশৃঙ্খলা করা চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ছাড়াও তিনি জেলার হিজড়াদের পুনর্বাসন, শহরের স্কুলগুলোতে ইভটিজিং রোধে মহিলা পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ পর্যাপ্ত টহলের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করবেন বলে তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। সে জন্য তিনি জেলা প্রশাসনসহ সকল সরকারী-বেসরকারী বিভাগসহ জেলাবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।