॥রফিকুল ইসলাম॥ রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ডাউকী গ্রামে গতকাল ১৯শে ফেব্রুয়ারী সকালে কহিরন নেছা(২৭) নামের এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের দাবী, সে দাম্পত্য কলহের জেরে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। অপরদিকে পিত্রালয়ের লোকজনের দাবী, তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। বিকালে রাজবাড়ী থানার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসেছে।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর পূর্বে ডাউকী গ্রামের চেনিরুদ্দিন ফকিরের ছেলে মনা ফকিরের সাথে একই ইউনিয়নের(চন্দনী) ধাওয়াপাড়া গ্রামের জব্বার মোল্লার মেয়ে কহিরন নেছার বিয়ে হয়। তাদের ৭ ও ৩বছর বয়সী ২টি ছেলে-মেয়ে রয়েছে। কহিরন নেছার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন এক পীরের মুরিদ। তারা কহিরন নেছাকেও সেই পীরের মুরিদ হওয়ার জন্য বলে। কিন্তু কহিরন নেছা এতে সম্মত না হওয়ায় পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি হয়। শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এই বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েকবার শালিসও হয়। গতকাল সোমবার সকালে স্বামী মনা ফকিরসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন স্থানীয়দের জানায়, ‘কহিরন নেছা বসত ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে দেখতে পেয়ে তারা ঝুলন্ত অবস্থা থেকে লাশ নামিয়ে বারান্দায় এনে রেখেছে।’ তবে ঘটনার কিছুক্ষণ পরই অবস্থা বেগতিক দেখে নিহতের স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ীর লোকজন পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দুপুরে রাজবাড়ী থানার পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
স্থানীয় ডাউকী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাশেদা খাতুন বলেন, তার স্কুলের সাথে নিহতের বাড়ীটি হওয়ায় তিনি প্রায়ই ওই বাড়ীতে মারামারি-ধস্তাধস্তির বিষয়টি টের পেতেন। ঘটনার দিন সকালেও তিনি স্কুলে এসে ওই বাড়ীতে মারামারির আওয়াজ পেয়েছেন। কিছুক্ষণ পর আরো শোর-চিৎকারের শব্দ পেয়ে এগিয়ে গেলে বাড়ীর বারান্দায় ওই গৃহবধুকে শোয়ানো অবস্থায় দেখেন। সে সময়ও সে মারা যায়নি। মূমুর্ষ অবস্থায় ছটফট করছিল। তখন তিনি নিহতের স্বামীকে জরুরীভাবে ডাক্তার ডাকার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ওই স্কুলেরই প্যারাশিক্ষক রুবেল সরদার বলেন, আমিও শোর-চিৎকার শুনে এসে বারান্দায় শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। আমি তার মাথায় পানি দেই। তখন মনা ফকির বাড়ীতেই ছিল।
চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সিরাজুল আলম চৌধুরী জানান, আমি স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওই বাড়ীতে গিয়ে বারান্দায় নিহতের লাশ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পাই। তখন আমি থানায় খবর দেই। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
চন্দনী ইউপির ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হালিম বলেন, প্রায়ই তাদের মধ্যে সমস্যা হতো। আমি একাধিকবার স্থানীয়দের নিয়ে শালিস-বিচার করে দিয়েছি। ঘটনার আগের রাতেও তাদের বিষয়ে শালিস করে দিয়েছিলাম।
নিহত কহিরন নেছার পিতা জব্বার মোল্লা বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার পর থেকেই তাদের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা চলছিল। স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন তাকে নির্যাতন করতো। তার ধারণা, তাদের নির্যাতনের ফলেই কহিরন নেছা মারা গেছে। তিনি জামাতা মনা ফকিরসহ তার পরিবারের লোকজনের উপযুক্ত বিচার ও শাস্তির দাবী জানান।
রাজবাড়ী থানার এস.আই জাহিদ জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশের সুরতহাল প্রস্তুতের পর লাশ থানায় নিয়ে এসেছেন। ময়না তদন্ত সম্পন্নের পর লাশ পরিবারের নিকট ফেরত দেয়া হবে। ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। তার আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।